ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ঢাকা প্লাটুনকে বড় সংগ্রহ এনে দিলেন মুমিনুল হক ও মেহেদি হাসান। জবাব দিতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তও খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, করলেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। পেলেন মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গ। দুই তরুণের ব্যাটে ইতিহাস গড়ল খুলনা টাইগার্স। বিপিএলের মঞ্চে প্রথম দল হিসেবে জিতল দুইশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ উইকেটে জিতে চূড়ায় থেকে প্রাথমিক পর্ব শেষ করল মুশফিকুর রহিমের দল। ২০৬ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে গেল ১১ বল বাকি থাকতে।
দ্বিতীয় আসরে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ১৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল সিলেট রয়্যালস। এতদিন এটিই ছিল বিপিএলে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। মিরপুরে এই প্রথম বিপিএলে কোনো ম্যাচে হলো ৪০০ রান। ২০১৩ সালে রংপুর-সিলেট ম্যাচের ৩৯৫ ছিল আগের সর্বোচ্চ।
বাজে ফর্মের জন্য জায়গা হারিয়েছিলেন শান্ত। ফেরার পর ভালো শুরু পাচ্ছিলেন, কিন্তু সেগুলো বড় করতে পারছিলেন না। অবশেষে পারলেন, আগের ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৫৪ ছাড়িয়ে করলেন ১১৫ রান।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ঢাকার। রবি ফ্রাইলিঙ্ককে বেরিয়ে এসে ওড়ানোর চেষ্টায় মিডঅফে ধরা পড়েন তামিম ইকবাল। তিনে নেমে ব্যর্থ এনামুল হক; ফ্রাইলিঙ্কের শর্ট বলে ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে।
আরিফুল হকের জায়গায় দলে ফেরা জাকের আলী বিদায় নেন ঝড়ের আভাস দিয়েই। ৩৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ঢাকা এগিয়ে যায় মুমিনুল ও মেহেদির ব্যাটে।
শুরুতে সাবধানী ব্যাটিং করছিলেন মুমিনুল। আর ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে থাকেন মেহেদি। ব্যক্তিগত ১২ রানে একটি সুযোগ দেন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে শর্ট থার্ড ম্যানে বেশ উঁচুতে উঠে যাওয়া ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি শহিদুল ইসলাম।
প্রথম ১০ ওভারে ৭৩ রান তোলা ঢাকা মুমিনুল ও মেহেদির তাণ্ডবে শেষ ১০ ওভারে যোগ করে ১৩২ রান।
শফিউল ইসলামকে দুই চারের পর ছক্কায় ৪১ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন মুমিনুল। পরে রান তোলেন আরও দ্রুত। ৩১ বলে আসরে তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন মেহেদি। দুই ব্যাটসম্যানই বড় শট খেলায় শেষের দিকে রান আসে বানের স্রোতের মতো।
৩৪ বলে পঞ্চাশে যায় জুটির রান, একশ হয় ৫৭ বলে। দেড়শ স্পর্শ করে কেবল ৭৭ বলে। এক সময়ে দেড়শই মনে হচ্ছিল দূরের পথ। সেখান থেকে মুমিনুল-মেহেদি দলকে নিয়ে গেলেন দুইশ রানে।
আগের সেরা ৬৪ ছাড়িয়ে ৯১ রান করেন মুমিনুল। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ৫৯ বলের ইনিংসটি গড়া চার ছক্কা ও সাত চারে। তার সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৮০ বলে ১৫৩ রানের জুটি উপহার দেন মেহেদি। তরুণ এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার আগের ব্যক্তিগত সেরা ৫৯ ছাড়িয়ে অপরাজিত থাকেন ৬৮ রানে। তার ৩৬ বলের টর্নেডো ইনিংসে ৫টি ছক্কার পাশে ৩ চার।
বিপিএলে চতুর্থ উইকেটে আগের রেকর্ড ছিল চিটাগং কিংসের লরি ইভান্স ও রায়ান টেন ডেসকাটের। গত আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে তারা গড়েছিলেন অবিচ্ছিন্ন ১৪৮ রানের জুটি।
রান তাড়ায় শুরুতে দলকে পথ দেখান মিরাজ। বড় শট খেলে শান্তকে দেন দেখেশুনে খেলে থিতু হওয়ার সুযোগ। আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন মিরাজ যেন শুরু করেন সেখান থেকেই। ২৫ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় করেন ৪৫।
মেহেদিকে বেরিয়ে এসে ওড়ানোর চেষ্টায় মিরাজ বোল্ড হলে ভাঙে ৭০ রানের জুটি। এরপর বোলারদের ওপর চড়াও হন শান্ত। শট খেলতে শুরু করেন রাইলি রুশোও। তাদের ৮১ রানের জুটিতে সমীকরণ অনেকটাই খুলনার দিকে হেলে পড়ে।
শাদাব খানকে ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে রুশো ফিরলে ভাঙে বিপজ্জনক জুটি। বাকিটা মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে সহজেই সারেন শান্ত। চার হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ৫৭ বলে খেলা ইনিংস গড়া আট চার ও সাত ছক্কায়। টুর্নামেন্টে আগের আট ম্যাচে তার রান ছিল ১১৫!
প্রথম কোয়ালিফায়ারে সোমবার রাজশাহী রয়্যালসের মুখোমুখি হবে খুলনা। সেদিনই এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে খেলবে ঢাকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা প্লাটুন: ২০ ওভারে ২০৫/৪ (তামিম ১, মুমিনুল ৯১, এনামুল ১০, জাকের ১৪, মেহেদি ৬৮*, থিসারা ৬*; আমির ৪-০-৩৫-১, ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-৩৫-২, শহিদুল ৩-০-৩৭-০, শফিউল ৪-০-৫০-১, মিরাজ ২-০-২২-০, আমিনুল ৩-০-২১-০)
খুলনা টাইগার্স: ১৮.১ ওভারে ২০৭/২ (শান্ত ১১৫*, মিরাজ ৪৫, রুশো ২৩, মুশফিক ১৮*; মেহেদি ৪-০-৩৯-১, মাশরাফি ৩-০-২৬-০, আশরাফ ৩-০-৪৭-০, মাহমুদ ৩.১-০-৪৩-০, শাদাব ৪-০-৩২-১, থিসারা ১-০-২০-০)
ফল: খুলনা টাইগার্স ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত