মোহাম্মদ নবির ব্যাটিং বীরত্বে দারুণ এক জয়ের আশা জাগিয়েছিল আফগানিস্তান। তবে ম্যাচের শেষ ওভারে এই অলরাউন্ডারকে থামালেন মোহাম্মদ শামি। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতে বিশ্বকাপে জয়ের পথেই থাকল ভারত।
সাউথ্যাম্পটনের রোজ বৌলে শনিবার ১১ রানে জিতেছে বিরাট কোহলির দল। ২২৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২১৩ রানে থামে আফগানিস্তান।
মন্থর উইকেটে ভারতীয় ব্যাসম্যানদের চেপে ধরেছিলেন আফগানিস্তানের স্পিনাররা। তার মধ্যেই দাপুটে ব্যাটিং করেন বিরাট কোহলি। শেষটায় দলকে পথ দেখান কেদার যাদব। তাদের ফিফটিতে ৮ উইকেটে ২২৪ রান করে ভারত।
দারুণ বোলিং করা নবি ব্যাটিংয়েও মেলে ধরেন নিজেকে। তবে শেষরক্ষা করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। বোলারদের সম্মিলিত চেষ্টায় জয় তুলে নেয় ভারত।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল আফগানিস্তানের। প্রথম বলে চার হাঁকিয়েছিল নবি। পরের বলে সিঙ্গেল না নিয়ে ধরে রাখেন স্ট্রাইক। তৃতীয় বল লং ধরা পড়েন লং অনে। পরের দুই বলে আফতাব আলম ও মুজিব উর রহমানকে বোল্ড করে ভারতের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েন শামি।
ম্যাচের শেষটা ভালো করা ভারতের শুরুটা ভালো ছিল না। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হারায় রোহিত শর্মাকে। আগের তিন ম্যাচে এক ফিফটি আর দুই সেঞ্চুরি করা এই ওপেনার বোল্ড হয়ে যান মুজিবের দারুণ এক ডেলিভারিতে।
শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন কোহলি। নড়বড়ে শুরুর পর নিজেকে ফিরে পাচ্ছিলেন লোকেশ রাহুল। তবে কঠিন সময় পার করে দিয়ে তিনি ফিরেন বাজে এক শটে। ভাঙে ৫৭ রানের জুটি।
মূল স্পিনারদের সবাই উইকেট থেকে সুবিধা পাচ্ছে দেখে রহমত শাহকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। কাজে লেগে যায় তার বোলিং পরিবর্তন। উইকেটে জমে যাওয়া বিজয় শঙ্করকে এলবিডব্লিউ করে ৫৮ রানের জুটি ভাঙেন অনিয়মিত লেগ স্পিনার।
টানা তৃতীয় ফিফটি পাওয়া কোহলি ছিলেন সাবলীল। তাকে থামিয়ে ভারতকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেন নবি। একটু বাড়তি লাফানো বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন অধিনায়ক। ৬৩ বলে খেলা তার ৬৭ রানের ইনিংস গড়া পাঁচটি চারে।
সাবধানী ব্যাটিংয়ে ভারতকে টানেন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কেদার। স্পিনে খেলছিলেন এক-দুই নিয়ে। পেসারদের পেলেই চেষ্টা করছিলেন বাউন্ডারির। শেষের দিকে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় রশিদ খানের ওপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন ধোনি। বেরিয়ে গিয়ে বলের নাগাল পাননি, ফিরে যান স্টাম্পড হয়ে।
শেষের দিকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়া। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৬৮ বলে ৫২ রানের ইনিংসে দলকে ২২৪ পর্যন্ত নিয়ে যান কেদার।
দুই পেসার আফতাব আলম ও নাইবের ১৬ ওভার থেকে ১০৫ রান নিয়েছে ভারত। স্পিনারদের ৩৪ ওভার থেকে এসেছে ১১৯ রান।
রান তাড়ায় শুরুতেই বিস্ফোরক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাইকে হারায় আফগানিস্তান। থিতু হয়ে ফিরেন নাইব। রহমত ও হাশমতউল্লাহ শাহিদির ব্যাটে এগিয়ে যাচ্ছিল আফগনারা। তিন বলের মধ্যে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে থামিয়ে তাদের বড় একটা ধাক্কা দেন বুমরাহ।
১০৬ রানে ৪ উইকেট হারানো আফগানিস্তানকে টানেন নবি। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারকে কিছুটা সঙ্গ দেন নাজিবউল্লাহ জাদরান ও রশিদ।
ম্যাচ অনেক গভীরে নিয়ে গিয়েছিলেন নবি। জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ২১ রান। ৪৯তম ওভারে দারুণ বোলিংয়ে বুমরাহ ৫ রান দিলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়। শামির করা শেষ ওভারে দারুণ চেষ্টা করেছিলেন নবি, তবে পারেননি তিনি। ৫৫ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ফিরেন ৫২ রান করে।
৪০ রানে ৪ উইকেট নেন শামি। দুটি করে উইকেট নেন বুমরাহ, যুজবেন্দ্র চেহেল ও পান্ডিয়া। ম্যাচ ভারতের পক্ষে ঘুরিয়ে দেওয়া বুমরাহ জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ২২৪/৮ (রাহুল ৩০, রোহিত ১, কোহলি ৬৭, শঙ্কর ২৯, ধোনি ২৮, কেদার ৫২, পান্ডিয়া ৭, সামি ১, কুলদীপ ১*, বুমরাহ ১*; মুজিব ১০-০-২৬-১, আফতাব ৭-১-৫৪-১, গুলবাদিন ৯-০-৫১-২, নবি ৯-০-৩৩-২, রশিদ ১০-০-৩৮-১, রহমত ৫-০-২২-১)
আফগানিস্তান: ৪৯.৫ ওভারে ২১৩ (জাজাই ১০, নাইব ২৭, রহমত ৩৬, শাহিদি ২১, আফগান ৮, নবি ৫২, নাজিবউল্লাহ ২১, রশিদ ১৪, ইকরাম ৭*, আফতাব ০, মুজিব ০; শামি ৯.৫-১-৪০-৪, বুমরাহ ১০-১-৩৯-২, চেহেল ১০-০-৩৬-২, পান্ডিয়া ১০-১-৫১-২, কুলদীপ ১০-০-৩৯-০)
ফল: ভারত ১১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জাসপ্রিত বুমরাহ