রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ নিজের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে।
“বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাঙ্গন টাকা রোজগারের জায়গা নয়, লোভ লালসা মোহ ত্যাগ করে এখান থেকে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারলে একদিন তোমরাই জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নেবার কান্ডারি হয়ে উঠবে।”
তিনি শিক্ষার্থীদের সকল অন্যায়, অনৈতিক কর্মকাণ্ড রুখে দেওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সকল কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে আয়োজিত প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য মো. আবদুল হামিদ কুমিল্লাকে ইতিহাস ঐতিহ্যের অগ্রসরমান জেলা উল্লেখ করে বলেন, কুমিল্লা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জনপদ। কুমিল্লার ভৌগোলিক অবস্থান ও এর সুপ্রাচীন ইতিহাস সুশিক্ষার ঐতিহ্যকে বহন করে। এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক জ্ঞানী ও গুণীজন, যারা তাদের মেধা, মনন ও প্রজ্ঞা দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন।
“এই জনপদে জন্ম নিয়েছেন মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী, ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, অনুবাদক লায়লা নুর, গীতিকার এবং কণ্ঠ শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা আপেল মাহমুদ, সঙ্গীত শিল্পী শচীন দেববর্মনসহ বহু শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানী-গুণী।”
জীবদ্দশায় জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের অনেকটা সময়ই কুমিল্লায় কাটার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া ময়নামতি যাদুঘর, বৌদ্ধবিহার, বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, শাহ সুজা মসজিদ, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, কুমিল্লা ধর্মসাগর, গোমতী নদী, লালমাই পাহাড় কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করে কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ব্রিটিশ ভারতে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালে ঐতিহাসিক কারণে এ অঞ্চলে খাদি শিল্প দ্রুত বিস্তার ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। উনিশ শতকে ত্রিপুরার ঘোষ সম্প্রদায়ের হাত ধরে রসমালাইয়ের প্রচলন হয়। কুমিল্লার মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন পণ্য এখনও বাংলার লোক শিল্পের আবহমান সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক হয়ে আছে।
শিক্ষায় মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৪টি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ জনই মেয়ে। ছেলেদেরকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদের সেই অর্জনকে দেশের কল্যাণ ও মানবতার কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।
মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন, মদ, গাঁজা, বিয়ারসহ নানারকম মাদক এখন সমাজের আনাচেকানাচেসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও ঠাঁই পেয়েছে।
“এসব আসার জন্য দেশের অন্যান্য জেলাতেও যেমন রুট রয়েছে, তেমনি কুমিল্লাতেও রয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলব, তোমরা আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা; তোমরা জাতির ভরসা। এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও। তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান অর্জন করো, টাকা রোজগারের চিন্তা করো না।”
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ।
ডিগ্রিধারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত প্রতি শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ফল অর্জনকারী স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের মোট ১৪ জন শিক্ষার্থীর হাতে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ স্বর্ণপদক পদক তুলে দেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে আড়াই হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েট অংশ নিয়েছেন।