শতবার ঘুরে এলো দিনটি। যেদিন পৃথিবীতে এসেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি নিয়ে যিনি পথ দেখিয়েছিলেন এ দেশের মানুষকে। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। সেই মহামানব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন ছিল গতকাল রোববার। উৎসবের এ দিনকে আরও রঙিন করে তুলল শিশুরা। তারা পরে এসেছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয় পোশাক ‘মুজিব কোট’। যেন সবাই ভবিষ্যতের ‘বঙ্গবন্ধু’। তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো সাতই মার্চের সেই অবিনাশী ভাষণ। সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে ছিল নূপুরের ঝঙ্কার। আতশবাজির ঝলকানি শেষে ব্যান্ড দলের পরিবেশনা। সব মিলিয়ে দারুণ এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার বছরব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের যাত্রা শুরু করল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মুক্তির গান’। এ আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার ছিল সমকাল, ৭১ টিভি ও বিডিনিউজ।
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন। যার শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর পর বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ ‘সেই অবিনাশী উচ্চারণ’ প্রতিযোগিতা নিয়ে কথা বলেন প্রতিযোগিতার সার্বিক সমন্বয়ক শিবলী হাসান। এ প্রতিযোগিতার শীর্ষ ৫০ শিশুর ভাষণের ভিডিও কোলাজ প্রদর্শিত হয় বড় পর্দায়। সাংস্কৃতিক সংগঠন বাতিঘরের শিশুশিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল নৃত্য-গীতিনাট্য ‘কখন আসবে কবি’।
সারাদেশের প্রতিযোগীর মধ্যে প্রথম সাতজন প্রতিযোগী পরিবেশন করেন সাতই মার্চের ভাষণ। ভাষণ পরিবেশন করেন আব্দুল্লাহ আল হাসান, সাদমান সাকিব নাবিল, আল-হাসনাত মাসুম শিহাব, সানজিদা আহমেদ তমা, আরাফাত আশিক নিহাল, ইফতেখারুল ইসলাম অর্পূব ও ফারহান সাদিক সামি।
সংক্ষিপ্তত আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সাদেক খান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত, শহীদ পরিবারের সন্তান শাওন মাহমুদ, মুক্তির গানের উপদেষ্টা সেলিম রেজা ও ফারজানা রূপা, মুক্তির গানের সম্পাদক শাকিল আহমেদ এবং সমন্বয়ক নবেন্দু নির্মল সাহা জয়। অতিথিরা ওই সাত শিশুর পাশাপাশি সেরা তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ময়মনসিংহের নান্দাইলের দরিল্লা-গয়েশপুর আ. হামিদ জুনিয়র হাই স্কুল, ঢাকার বশির উদ্দিন আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মোহাম্মদাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসাকে পুরস্কৃত করা হয়।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হৃদয়ে যা ধারণ করতেন, সেটিই তিনি বলেছিলেন সাতই মার্চের ভাষণে। যেসব শিশু সাতই মার্চের ভাষণের এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে, তারাও ভাষণকে হৃদয়ে ধারণ করেছে। এই শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যাদের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।’
বক্তব্য ও পুরস্কার প্রদান পর্ব শেষে জাদুশিল্পী লিটন পরিবেশন করেন জাদু।
এরপর কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘সাতই মার্চের বিকেল’ অবলম্বনে নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন ‘নৃত্যম’-এর নৃত্যশিল্পীরা। যার পরিচালনায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী তামান্না রহমান। অনুষ্ঠানে দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয় বহ্নিশিখা। দলটির শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘ঐ মহামানব আসে’, ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’সহ বেশ কয়েকটি গান।
গান চলতে চলতে নেমে আসে সন্ধ্যা। গানের সুর থামতেই আকাশকে আলোকিত করে বর্ণিল আতশবাজি। এরপর ছিল তিন ব্যান্ড দলের পরিবেশনায় কনসার্ট। শুরুতেই মঞ্চে আসে গানপোকা। এরপর অবসকিওর। দলটি শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে গেয়ে শোনায় ‘পিতা’ গানটি। প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ূব বাচ্চুকে উৎসর্গ করে গেয়ে শোনায় ‘তোমার স্মৃতি নিয়ে’ গানটি। ‘ভণ্ড বাবা’ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাদের পরিবেশনা। সবশেষে মঞ্চে আসে ব্যান্ড দল আর্টসেল। তাদের শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘অদেখা’, ‘অন্যসময়’ গানগুলো।