শুল্ক ফাঁকির জরিমানা আরও বাড়ছে

Untitled-47-samakal-5ee9289e0ed9e

এবারের বাজেটে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক্ক ফাঁকি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক্ক ফাঁকিতে জরিমানা বাড়ছে। যে যত বেশি ফাঁকি দেবে, তাকে তত বেশি জরিমানা করা হবে। এমন বিধান রেখে বর্তমান শুল্ক্ক আইনের (কাস্টমস অ্যাক্ট) একটি ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয় ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে।

এনবিআর সূত্র বলেছে, বর্তমানে পণ্য চালানের ঘোষিত মূল্যের ভিত্তিতে শুল্ক্ক ফাঁকি শনাক্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রচলিত এ বিধান পরিবর্তন করে ‘শুল্ক্ক ফাঁকির পরিমাণের’ আলোকে জরিমানা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এনবিআর বলেছে, এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে শুল্ক্ক আহরণ অনেক বাড়বে। একই সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ‘ঐচ্ছিক’ ক্ষমতা হ্রাস পাবে। ফলে হয়রানি থেকে রেয়াই পাবেন ব্যবসায়ীরা।

বর্তমান কাস্টমস অ্যাক্ট বা শুল্ক্ক আইনে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি করে শুল্ক্ক ফাঁকি দিলে শাস্তি হিসেবে ফাঁকি দেওয়া টাকার অঙ্কের সর্বোচ্চ তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানার নিয়ম রয়েছে। এনবিআর সূত্র বলেছে, বিদ্যমান আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। কারণ, দেখা যায় কাকে কত টাকা জরিমানা করা হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করছে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তার মর্জির ওপর। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে সমঝোতার সুযোগ আছে।

সূত্র জানায়, জরিমানা ধার্যের বিষয়টি শুল্ক্ক কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ ইচ্ছার ওপর নির্ভর করার কারণে অবৈধ লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে জরিমানা কমবেশি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্মকর্তাদের এরূপ ‘ঐচ্ছিক’ ক্ষমতার কারণে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।

এনবিআর বলেছে, এখানে দুর্নীতির বড় সুযোগ থাকায় প্রতি বছর সরকার বিপুল রাজস্বের হারাচ্ছে। এ কারণে ফাঁকি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। এ লক্ষ্যে বাজেটে বর্তমান কাস্টমস অ্যাক্টের ১৫৬ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে শুল্ক্ক ফাঁকি রোধে জরিমানা আরও কঠোর করার প্রস্তাব করা হয়।
রাজস্ব বোর্ডের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান নিয়মে কাস্টমস কর্মকর্তা ইচ্ছামতো কাউকে কম আবার কাউকে বেশি জরিমানা ধার্য করেন। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তার ঐচ্ছিক ক্ষমতা থাকার কারণে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন আমদানিকারকরা।

এ অবস্থার প্রেক্ষিতে নতুন বাজেটে পণ্যের মোট মূল্যের পরিবর্তে যে পরিমাণ ফাঁকি হবে তার ওপর ভিত্তি করে জরিমানা ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে কাস্টমস কর্মকর্তার ঐচ্ছিক ক্ষমতা হ্রাস পাবে। বাজেটে এ প্রস্তাব কার্যকর হলে শুল্ক্ক ফাঁকির প্রবণতা অনেক কমবে বলে জানান তিনি।

আমদানি পর্যায়ে আন্ডার ইনভয়েসিং (পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেখানো) এবং ওভার ইনভয়েসিং (অতি মূল্যায়িত) মাধ্যমে মিথ্য ঘোষণা দেওয়া হয়। শুল্ক্ক ফাঁকির লক্ষ্যে এক পণ্যের বদলে অন্য পণ্য কিংবা মূল্য কারসাজির জন্য মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়। কখনও কখনও আমদানির শর্ত এড়াতে মিথ্যা ঘোষণার সুযোগ নেওয়া হয়। কী পরিমাণ মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয় তেমন কোনো পরিসংখ্যান এনবিআরের কাছে নেই। এ নিয়ে কোনো গবেষণাও হয়নি। তবে কাস্টমস হাউসে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন ও এনবিআরে এ সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ হলো বাংলাদেশে মোট আমদানির গড়ে অন্তত ১৫ শতাংশ চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক্ক ফাঁকি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের একটি সূত্র বলেছে, বাণিজ্যিক পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া উচ্চহারে শুল্ক্কযুক্ত পণ্য আমদানিতে এ প্রবণতা বেশি থাকে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী, ফেব্রিকস (প্রস্তুতকৃত কাপড়), সিরামিক, টাইলস অন্যতম।

উচ্চ শুল্ক্কযুক্ত পণ্য যেমন অ্যালকোহল, সিগারেট ও মোবাইল সেট আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া শুল্ক্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয় বেশি।

জানতে চাইলে কাস্টমস কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান (ভ্যাট অনলাইনের প্রকল্প পরিচালক) বলেন, শুল্ক্ক ফাঁকি কমাতে হলে বন্ড ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া কাস্টমস হাউসে দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তার পদায়ন, চাহিদা মোতাবেক জনবল নিয়োগ, অবকাঠামো শক্তিশালী ও আধুনিক স্ক্যানার মেশিন বসাতে হবে।

আরও কিছু পদক্ষেপ : প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক্ক সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন মামলার বিচার কাজ দ্রুত করার লক্ষ্যে আপিলাত ট্রাইব্যুনালকে আরও শক্তিশালী ও কাস্টমস বিভাগকে আধুনিকায়ন করতে চলমান ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে কাস্টমস বিভাগে আলাদা একটি কমিশনারেট গঠনের কথা ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। এনবিআর সূত্র বলেছে, আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে ঘরে বসেই এলসি খুলতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে বিশ্বব্যাংকের অর্থয়নে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এনবিআর।

Pin It