সম্প্রতি জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া তিনটি আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় তৎপরতার পাশাপাশি দলের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
শূন্য হওয়া এ আসনগুলো হলো—ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩। আসলামুল হক আসলাম, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু ও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যাওয়ার পর আসন তিনটি শূন্য হয়। আব্দুল মতিন খসরু এবং মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আসনগুলো শূন্য হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনও তফসিল ঘোষণা করা হয়নি।
আগামী জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আসনগুলোতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও বিষয়টি নির্ভর করছে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ওপর। তবে তফসিল ঘোষণা না হলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত ৪ এপ্রিল ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের মৃত্যুর পর ১৩ এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষাণা করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা না হলেও ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশি প্রার্থীরা এলাকায় ব্যানার, পোস্টারসহ বিভিন্নভাবে নিজেদের উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে মনোনয়ন নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ আসনে আসলামুল হক আসলামের পরিবারের সসদস্যদের মধ্যে তার স্ত্রী মাকসুদা হকের নাম আলোচনায় আছে। আলোচনায় রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নাম। ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনও এই আসনে মনোনয়ন চান। এছাড়া সাবেক ছাত্র নেতা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি, সাবেক কাউন্সিরর মনোয়ার হোসেন ডিপজল, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও এ বি এম মাজহারুল আনাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেকেই আসনটিতে মনোনয়নের জন্য নিজের নাম প্রচারে আনছেন।
জানতে চাওয়া হলে যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, এলাকার মানুষের প্রত্যাশা আমি নির্বাচন করি। এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি প্রার্থী হব। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই তো প্রার্থী হবেন।
গত ১৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু মারা যান। তার মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য হয়। ইতোমধ্যেই এই আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে নেমেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এলাকায় বিভিন্ন ধরনের তৎপরতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা।
আসনটিতে প্রয়াত আব্দুল মতিন খসরুর পরিবারের চার জন সদস্যের নাম মনোনয়ন আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন—মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিনা সোবহান খসরু, ছেলে মুনেফ ওয়াসিফ, মেয়ে ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন এবং ভাই অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস। এছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, বুড়িচং উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লায়ন ইঞ্জি মো. আল আমিন, বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, সাবেক ছাত্র নেতা অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী, যুবলীগ নেতা এহতেশামুল হাসান ভূইয়া রুমি।
সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী গত ১১ মার্চ মারা যান। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। এই আসনে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক জন নেতা তৎপর রয়েছেন। মাহমুদ উস সামাদের স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরীও এই আসনে মনোনয়ন চান বলে জানা গেছে।
এছাড়া এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও রয়েছেন—আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান গৌছ সুলতান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহসচিব ডা. এহতাশামুল হক চৌধুরী দুলাল।