নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছিল ফেব্রুয়ারির দিনগুলো। রাজনীতিমনস্ক ছাত্রদের ব্যস্ততার শেষ নেই। পোস্টার-ব্যানার তৈরি, ইশতেহার ছাপা ও বিতরণ, ছাত্রাবাস-ছাত্রাবাসে যোগাযোগ নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে একুশের কারিগরদের সম্ভবত সঠিক ধারণা ছিল না, মুসলিম লীগ সরকার কতটা ফ্যাসিস্ট চরিত্রের হতে পারে।
১৯৫২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ‘পাকিস্তান অবজারভার’-এ মুসলিম লীগ শাসনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি সম্বন্ধে একটি সমালোচনামূলক সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয় ‘ক্রিপটো ফ্যাসিজম’ (ছদ্ম ফ্যাসিজম) শিরোনামে। এতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
পরদিনই (১৩ ফেব্রুয়ারি) পূর্ব পাকিস্তানের নুরুল আমিনের সরকার জননিরাপত্তা আইনের সুযোগ নিয়ে ঘোষণা দেয়- ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘পাকিস্তান অবজারভার’ প্রকাশ নিষিদ্ধ। গ্রেফতার করা হয় পত্রিকার মালিক সাবেক মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী ও সম্পাদক আবদুস সালামকে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা জামিনে মুক্তি পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ছাত্রসভায় সরকারের স্বৈরাচারী পদক্ষেপের প্রতি নিন্দা জানিয়ে ‘অবজারভার’র ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবি তোলা হয়।
ছাত্ররা ঠিকই বুঝে ছিল যে, ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচি ব্যাহত করার উদ্দেশ্যেই আন্দোলনের সমর্থক পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ করেছে নুরুল আমিন প্রশাসন। স্বভাবতই এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের প্রতিবাদ আরও তীব্র হয়। মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা আলাদাভাবে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের কমনরুমে ছোটখাটো একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন এবং ‘অবজারভার’র ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান।
শুধু ছাত্র সমাজই নয়, যুবলীগও সরকারের ওই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানায়। তাদেরও একই ভাবনা- সরকার ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন হ্রাস করতে ‘পাকিস্তান অবজারভার’র প্রকাশনা বন্ধ করেছে। তাই তাদেরও দাবি, অবিলম্বে বিনা শর্তে যেন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
‘ইত্তেফাক’, ‘ইনসাফ’, ‘নওবেলাল’ প্রভৃতি পত্রিকা ‘অবজারভার’র পক্ষ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা বিশেষভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে।