জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন। দলটির নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ওপর সবার একটা আস্থা আছে। আপনারা সেনা মোতায়েনের কথা বলেছেন- এর আগে সংলাপে প্রায় সবকটি দল একই কথা বলেছে। আমরা লক্ষ করেছি- সেনাবাহিনীর উপস্থিতি একান্তভাবে কাম্য। তারা (সেনাসদস্যরা) দায়িত্ব পালন করলে সেটার ইতিবাচক দিক থাকবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে দলটির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। আগামী নির্বাচনে প্রয়োজনে সেনা মোতায়েনসহ ১২ দফা দাবি দলটির পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে।
বৈঠকে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটের সময় একটা সরকার থাকবে। অনেকে দুশ্চিন্তায় থাকেন- সরকার নিরপেক্ষ থাকবে কিনা। সাংবিধানিকভাবেই সরকার নিরপেক্ষ থাকতে এবং নির্বাচনে সহায়তা করতে বাধ্য। তাই নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ হবে তা সরকারের ওপর নির্ভর করবে। সরকারের যে সহায়তা, তার ওপর আমাদের নির্ভর করতে হবে। সরকার বলতে আমরা বুঝি- জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন। ভোটে লার্জলি (বড় পরিসরে) ডিপেন্ড (নির্ভর) করতে হবে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, আপনাদের (রাজনৈতিক দল) বলব- এটা একটা খেলা। যদি আপনারা ঠিকমতো না খেলেন (‘ইটস এ গেম। ইফ ইউ ডু নট প্লে ওয়েল), তাহলে জেতার প্রত্যাশা করবেন না। আপনাদের সবাইকে বলছি- যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দিতে হবে। আপনাদের পক্ষ থেকে সহায়তা লাগবে। কারণ রাজনীতিবিদদের অভিজ্ঞতা বেশি। কী করে রাজনীতির মাঠে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হয়, কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে আচরণ করতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা আছে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যদি ঠিকভাবে এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারেন, এজেন্ট যদি সাহসী ও অনুগত হয়, যদি তিনি শক্ত হয়ে দাঁড়ান, তাহলে আরেকজনের পক্ষে আপনার বিপক্ষে অনাচার ও কারচুপি করা কঠিন। তিনি বলেন, আমি কিন্তু ওখানে (ভোটকেন্দ্রে) পাহারা দিতে পারব না। ৪২ হাজার কেন্দ্রে তিন লাখ বুথে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। এটা ফেরেশতারা পারে। আমরাও পারব না।
বৈঠকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব বলেন, এ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এক হাজার ৩০০-এর বেশি নির্বাচন করেছে। নির্বাচনি অরাজকতায় একজনও মারা যায়নি। দু-একটি ছোট ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, ইসিতে যারাই আসেন দেশি হোক বিদেশি তাদের জিজ্ঞাসা করি- আমরা আর কী কী করলে এর থেকে ভালো নির্বাচন করতে পারতাম- কিন্তু তারা বলতে পারেন না। এটাই আমাকে শান্তি দেয়। তিনি বলেন, আমরা শতভাগ ইমান, বিবেক ও আইনের সঙ্গে থেকে কাজ করব।
বৈঠক শেষে ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে দলগুলো অংশ নেবে- তাদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করা স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে প্রধান বাধা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন- এসব নিয়ন্ত্রণে ইসির ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি বলেন- প্রথম হলো আইন ও সংবিধানের আলোকে কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কমিশন সেই ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করবে। ক্ষমতা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে।
এদিকে বৈঠকের বিষয়ে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী বলেন, দেশের জনগণ যাতে নির্বাচনমুখী হয়, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারে, ফলাফল মেনে নিতে পারে- সেই ধরনের নির্বাচন প্রত্যাশিত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা সংবিধান কাউকে দেয়নি। যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, সেই অধিকার আছে। কিন্তু কেউ কাউকে বাধা দিতে পারে না। সে অধিকার জনগণ কাউকে দেয়নি। যারা প্রতিহত করবে তারা কিন্তু সংবিধান লংঘন করবে, আইন লংঘন করবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কারও ছত্রছায়ায় আমরা নির্বাচন করছি না। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের থাকবে। সেভাবে আমরা কাজ শুরু করেছি। সময় বলে দেবে ভবিষ্যতে কী হবে।