খাবারে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীরে শুধু শক্তি-ই যোগায় না, হজম শক্তিতেও প্রভাব ফেলে।
সুস্থ থাকার জন্য পরামর্শের অভাব হয় না। ভোরে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল আবার খালি পেটে ব্যায়ামসহ এমন নানান অভিমত শোনা যায়।
তবে সুস্থ থাকার অন্যতম পন্থা হজমশক্তি ধরে রাখতে যে অভ্যাসের কথা বলা হয়, সেটা একেবারেই সহজ।
প্রতিদিন সকালের একটি খাবার সারা দিনের হজম ভালো রাখতে পারে। অর্থাৎ নাস্তায় আঁশযুক্ত খাবার যোগ করা।
এই ছোট অভ্যাস-ই সারা দিন পেটের স্বস্তি ধরে রাখতে সহায়ক হবে।
বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের সাবেক প্রধান ও পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার আলো জানান, সকালের খাবারে আঁশ থাকলে শরীরের ভেতরের কাজকর্ম অনেকটাই ছন্দে আসে।
তার মতে, “সকালের নাস্তায় ওটস, ফল, বাদাম বা বীজের মতো আঁশসমৃদ্ধ খাবার রাখলে শুধু হজম ভালো হয় না, রক্তে শর্করার ওঠানামাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।”
সকালের আঁশ যে জন্য এত জরুরি
“সকালের নাস্তায় আঁশ থাকলে খাবারের শর্করা শরীরে ধীরে ধীরে শোষিত হয়। এতে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। বিশেষ ধরনের দ্রবণীয় আঁশ পাকস্থলী ও অন্ত্রে খাবারকে ঘন করে রাখে, ফলে শরীর ধীরে শক্তি পায়।”
এই অভ্যাস দীর্ঘদিন ধরে বজায় রাখলে ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে।
অনেকের নাস্তায় সাদা রুটি, পরোটা বা মিষ্টি খাবারের আধিক্য থাকে। এতে পেট ভরে ঠিকই, তবে কিছুক্ষণ পর আবার ক্ষুধা লাগে।
আঁশযুক্ত খাবার এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
পরের বেলার খাবারের ওপরও প্রভাব পড়ে
সকালে আঁশ গ্রহণের সুফল শুধু নাস্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটিকে বলা হয় দ্বিতীয় খাবারের প্রভাব।
অর্থাৎ, সকালের খাবারে আঁশ থাকলে দুপুরের খাবার খাওয়ার পরও রক্তে শর্করার ওঠানামা তুলনামূলক কম হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত আঁশসমৃদ্ধ নাস্তা করেন, তাদের সারা দিনের বিপাকক্রিয়া বেশি স্থিতিশীল থাকে।
এ কারণে নাস্তা বাদ দেওয়া বা খুব হালকা কিছু খেয়ে বেরিয়ে পড়ার অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো নয়। বরং সকালেই পেটের ভেতরের প্রস্তুতি সেরে নিলে বাকি সময়টা অনেক স্বস্তিতে কাটে।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আঁশ
অনেকেই সকাল নাস্তা করার পরও বেলা বাড়তেই দুর্বলতা বা হঠাৎ ক্ষুধা অনুভব করেন।
পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলোর মতে, “আঁশযুক্ত খাবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। এতে বারবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে।”
তিনি বলেন, “আঁশের সঙ্গে যদি সামান্য প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি যোগ করা যায়, তাহলে এর প্রভাব আরও ভালো হয়। কলা, পেয়ারা, পেঁপে, শসা, বাদাম বা চিড়া সহজলভ্য আঁশের উৎস। এগুলো দিয়ে সহজেই পুষ্টিকর নাস্তা তৈরি করা যায়।”
প্রতিদিনের প্রয়োজনের কাছাকাছি পৌঁছানো সহজ হয়
প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের দৈনিক আঁশের চাহিদা প্রায় ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রায় ৩৮ গ্রাম।
তবে এই পুষ্টিবিদ জানান, বাস্তবে খুব অল্প মানুষই এই মাত্রায় পৌঁছাতে পারেন।
তাই দিনের শেষে ভারী খাবারের মধ্যে আঁশের কথা আলাদা করে মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
তিনি পরামর্শ দেন, “সকালের দিকেই আঁশকে অগ্রাধিকার দিতে। এতে দিনের শুরুতেই প্রয়োজনের বড় একটি অংশ পূরণ হয়ে যায়, রাতের খাবারে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।”
সকাল যে কারণে সবচেয়ে ভালো সময়
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়, দিনের শুরুতে শরীর শর্করা সামলাতে বেশি সক্ষম থাকে। সকালবেলায় ইন্সুলিনের কার্যকারিতা তুলনামূলক ভালো থাকে, যা সন্ধ্যার দিকে ধীরে ধীরে কমে।
তাই সকালে আঁশ খেলে শরীর সেটি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে।
আঁশ গ্রহণের অভ্যাসে তিনটি উপকার একসঙ্গে পাওয়া যায়- নাস্তার পর রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি ঠেকায়, দুপুরের খাবারের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং দিনের সেই সময়টাকে কাজে লাগায়, যখন শরীর সবচেয়ে দক্ষ থাকে।
সন্ধ্যার স্বস্তির সঙ্গেও সম্পর্ক আছে
সকালে ও দুপুরে আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে রাতের দিকে পেট ভারী লাগে না। সন্ধ্যায় খুব বেশি আঁশ খেলে অনেকের গ্যাস, পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি হতে পারে।
সকালে আঁশ খেলে সারা দিন সেটি ধীরে ধীরে কাজ করার সুযোগ পায়, ঘুমের সময় সমস্যা তৈরি করে না।
নাস্তায় যেভাবে আঁশ যোগ করবেন
“নাস্তায় আট থেকে দশ গ্রাম আঁশ থাকলেই ভালো ফল পাওয়া যায়। একটি বাটি শস্যজাত খাবারের সঙ্গে ফল আর সামান্য বাদাম বা বীজ যোগ করলেই এই মাত্রা পূরণ করা সম্ভব। এতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের আঁশই পাওয়া যায়, যা হজমের জন্য উপকারী। প্রাকৃতিক খাবারকেই গুরুত্ব দিতে হবে”- বলেন এই পুষ্টিবিদ।
দিনের বাকি সময়ের ভারসাম্য
সকালে আঁশের পর বিকেলের দিকে প্রোটিনের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
প্রোটিন দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় নাস্তার প্রবণতা কমায়। বিকালে দই, ডাল বা সবজি দিয়ে হালকা খাবার রাখলে রাতের খাবার পর্যন্ত স্বস্তি বজায় থাকে।





