সত্যি লুকাতেই ডিজিটাল আইনের ‘অপব্যবহার’: ফখরুল

fakhrul-090520-01

করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক অপব্যবহার চলছে অভিযোগ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বিএনপি সুস্পষ্ট ভাষায় জানাতে চায়, বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কেবল সরকারকে জনরোষের আগুন থেকে রক্ষার জন্যই অপব্যবহার চলছে। এই মুহূর্তেই রাষ্ট্রের এই অন্যায় বন্ধ করতে হবে।

“এই গণবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে। আমরা চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারীর সময়ে সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনের অপপ্রয়োগ করে গ্রেপ্তার ও হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

মহামারীর এ সময়ে ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানো’র অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সম্প্রতি সংবাদকর্মীসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ফখরুল বলেন, “দেশে একটি কার্য্কর মানহানি আইন থাকা সত্ত্বেও নির্যাতন ও হয়রানির উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকেই বার বার ব্যবহার করছে সরকার। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে পেছনে হাতমোড়া অবস্থায় হ্যান্ডকাফ পড়া সাংবাদিকের (শফিকুল ইসলাম কাজল) ছবিসহ সংবাদ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকার কিভাবে সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে চলছে তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।

“গণতান্ত্রিক অধিকার তো দূর থাকুক মানুষ তার কষ্টের কথাও যাতে ভার্চুয়াল জগতে প্রকাশ করতে না পারে তার জন্য একের পর এক পরিপত্র জারি করে চলেছে সরকার। বিটিআরসির মতো একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে পরিণত করেছে ডিজিটাল জগতে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রধান পুলিশি প্রতিষ্ঠানে।শুধু বিএনপি নয়, সকল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদপত্র সম্পাদকদের সম্মিলিত সংগঠনও ওই গণবিরোধী আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে সাতজন রাষ্ট্রদূত, তারাও টুইটারের মাধ্যমে এই গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করতে বলেছেন সরকারকে।”

তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হরদম গ্রেপ্তার করা হচ্ছে ও আতংকের মধ্যে রাখা হয়েছে। অথচ ত্রাণের চাল চোর ও গম চোররা নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে সরকারের নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং ফ্যাসিবাদী চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারের জারিকৃত পরিপত্রগুলো কী রকম ডিকটেটোরিয়াল চিন্তা করা যায় না। এখন চুরি হচ্ছে এক জায়গায়, চাল চুরি হচ্ছে, গম চুরি হচ্ছে, সোয়াবিন তেল চুরি হচ্ছে, রিলিফ চুরি হচ্ছে- এসব সম্পর্কে যদি লেখতে যান তাহলে কি সেটা অন্যায় হবে? সত্য উদঘাটন করাই তো সাংবাদিকদের কাজ।

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধরনের আইন করে, এই ধরনের পরিপত্র জারি করে শুধুমাত্র দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এখন যে প্রশ্নটা এসে যায় যে, সরকার এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিরব কেন? আর যারা এসব তুলে ধরছে, কথা বলছে তাদের ওপর সরকার দমনপীড়ন চালাচ্ছে কেন? এই ক্ষেত্রে সরকারের নিশ্চয়ই এখানে কোনো দুর্বলতা আছে, যেকারণে তারা প্রশ্রয় দিয়ে বেড়াচ্ছে।”

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই যে সত্য খবর লুকানোর কারণটা কী, হাইড করার কারণটা কী? কেন এই ধরনের দমন-নির্যাতন চলছে? তার অর্থ সত্য কথা যাতে বেরিয়ে না আসে। এটা কার স্বার্থে যাচ্ছে? সরকারের স্বার্থে কিন্তু যাচ্ছে না আল্টিমেটলি। এই সত্য গোপন করার ফলে ইনফর্ম না হওয়ায় সেই কাজগুলো করতে পারবে না। এমনিতে তো বিচ্ছিন্ন সবাই, তারপরে সোশাল মিডিয়ার খবরগুলো যদি না পায় তাহলে খবর জানবে কোত্থেকে?”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারসহ সকল রাজবন্দি, আদালত পুরোপুরি না খোলা পর্যন্ত হত্যা-ধর্ষণসহ জঘন্য অপরাধ ছাড়া সব ধরনের গ্রেপ্তার বন্ধ রাখা অথবা বিকল্প হিসেবে গ্রেপ্তারদের আদালত খোলার পর আত্মসমর্পণের শর্তে মুচলেকায় মুক্তি, লঘু অপরাধে ও রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তারসহ বয়স্ক ও নারী বন্দি, দলের নেতাদের মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

একইসঙ্গে কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার আওতায় আনা এবং আক্রান্তদের যথাযথ চিকিৎসার দাবিও জানান তিনি।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

Pin It