বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে থাকায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই খাদ্যপণ্যের দাম কেজিতে কমেছে ১০০ টাকার মতো।
দাম কমতে থকায় ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও কিছুটা আতঙ্কে পড়েছেন পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা।
তারা বলছেন, দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর গত দুই মাস ধরে বিক্রি যে হারে কমে গিয়েছিল, সেই পরিস্থিতির এখনও উত্তরণ ঘটেনি। আড়ৎ ও মুদি দোকানে এখনও পেঁয়াজের বিক্রি খুব কম।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী মার্কেট, বড়বাগ কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে পেঁয়াজ বাজারের এই চিত্র দেখা গেছে।
এদিন মিরপুর বড়বাগে মুদি দোকান মীম অ্যান্ড প্রান্তিকায় নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১০০ টাকায়, যে পেঁয়াজ গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
এদিন মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৩০ টাকায়। এই পেঁয়াজের দামও গত সপ্তাহে ২০০ টাকার কাছাকাছি ছিল।
সংকট সামালে আনা চীন, মিশর ও তুরস্কের পেঁয়াজ বাংলাদেশের বাজারে কিছুটা নমনীয় ভাব এনেছিল; গত সপ্তাহে এসব পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছিল। এখন তা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ টাকায়।
এই দোকানের বিক্রেতা রাসেল বলেন, “বাজারে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসার পর মানুষ চীন-তুরস্কের পেঁয়াজ কেনা ছেড়ে দিয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২০ থেকে ৩০ টাকা লোকসান দিয়ে কেজি ১৩০ টাকায়ও বিক্রি করা যাচ্ছে না। সবাই এখন নতুন পেঁয়াজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
এই দোকান থেকে দেশি পেঁয়াজ কিনে শামীম নামের একজন ক্রেতা বলেন, “এখন দাম কিছুটা নাগালের মধ্যে আসছে বলা য়ায়। যেখানে আড়াইশ টাকা করে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে সেটা এখন একশ টাকার ভেতরে চলে এসেছে। দাম এখনও বেশি হলেও সেটা আর গায়ে লাগছে না।”
এই বাজারে চীনের রসুন প্রতিকেজি ১৪০ টাকা এবং দেশি রসুন ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া নতুন আলু ৩৫ টাকা, পুরান আলু ২৫ থেকে ২৮ টাকা, আদা ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়।
মিরপুরের শাহ আলী মার্কেটে চাঁদপুর ট্রেডার্সের মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে থাকায় সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে। তবে বেচা বিক্রি আগের মতোই অনেক কম, বিক্রি এখনও বাড়েনি।
“গত তিন দিনে চীনা পেঁয়াজ কেজি ৬০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় নেমেছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজও দেড়শ টাকা থেকে কমে ৯০ টাকা হয়েছে। দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা কেজি,” বলেন তিনি।
মিরপুরে ইমরান বাণিজ্য ভাণ্ডারের সাত বস্তা দেশি পুরোনো পেঁয়াজ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। গত রোববার ফরিদপুরের একটি হাট থেকে ৪০ বস্তা পেঁয়াজ কেনার পর এখনও ৫-৭ বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় তিনি।
সাইফুল বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজার পড়তির দিকে। প্রতিকেজি ২১৮ টাকা দরে কেনা পেঁয়াজ এখন দেড়শ টাকা দরেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। নতুন পেঁয়াজের দামও দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা কমে ৮০ টাকায় নেমেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের দোকানগুলোতে দেখা যায়, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ, মিশর, তুরস্ক, চীন ও মিয়ানমারের পেঁয়াজে আড়ৎগুলো ভরপুর।
গত সপ্তাহে এসব আড়তে দেখা গিয়েছিল কেবল চীন ও মিশরের পেঁয়াজ। দেশি যে পেঁয়াজ ছিল তারও দাম ছিল প্রতিকেজি ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে।
কারওয়ান বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, মিশর ও চীনের পেঁয়াজ ৮০ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের মতো শাক সবজির দামও কিছুটা কমতির দিকে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাইমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, বাজারে এখন সিমের কেজি ৩০ টাকা, মিষ্টি আলু ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, খিরা ৫০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।