বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর থেকে আপত্তি জানিয়ে আসছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, এখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল যে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাচ্ছে না তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে যে তারাও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় তারাও যাচ্ছে না।
ফলে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি মাত্র পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউজিসি, তা আবারও হোঁচট খেল।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়।
একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার এক দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পড়লে শিক্ষার্থীকে যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হয়।
শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ ও অভিভাবকদের ব্যয় লাঘবের লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা চালিয়ে এলেও সফল হচ্ছিল না।
এবার বেশ আঁটঘাট বেঁধেই গত ১১ ফেব্রুয়ারি সব উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে ইউজিসি সিদ্ধান্ত নেয়, এবার থেকেই সমন্বিত পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হবে।
এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানোর আগে ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটও এতে ‘রাজি’ হয়েছে।
কিন্তু ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট থেকে আপত্তি আসছিল। গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট না জানিয়ে দেওয়ার পর সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায়ও আগের মতো নিজস্ব পদ্ধতিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে পদ্ধতি বলবৎ আছে, সে পদ্ধতিতেই বহাল থাকবে।”
তিনি বলেন, “কখনও কোনো সংস্কার আনতে হলে সেটা একাডেমিক কাউন্সিল বা ডিন’স কমিটি সংস্কারগুলো আনবে। আজকে ডিন’স কমিটির সুপারিশেই একাডেমিক কাউন্সিলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।।”
সান্ধ্য কোর্স স্থগিত
ইউজিসির নির্দেশনার প্রেক্ষাপটে সান্ধ্য কোর্সে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িক স্থগিত রাখতে বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল।
সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, “সান্ধ্য কোর্স নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্তের এক জায়গায় একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
“সেটি হলো প্রো-ভিসি (শিক্ষা)কে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে প্রো-ভিসি( প্রশাসন), কোষাধ্যক্ষ এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ থাকবেন। আর আইবিএ ও শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালককে রাখা হয়েছে ।”
পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এই কমিটিকে। তার আগে কোনো বিভাগ সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি করতে পারবে না।
উপাচার্য বলেন, “এর মধ্যে যারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেগুলো স্থগিত থাকবে। আর যে কোর্সগুলো চলমান, সেগুলোর বিষয়ে কিছু করার নেই, সেগুলো চলবে। তারপর প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেটা একাডেমিক কাউন্সিলে যাবে। সেখানে জাতীয় চাহিদা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
সান্ধ্য কোর্স নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কড়া সমালোচনার পর ইউজিসি এগুলো বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়।
এরপর গত বছর ২৭ মে এসব কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাই ও পর্যালোচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন ডিনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ চৌধুরীকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়।
ওই কমিটি আট মাসেরও বেশি সময় পর্যবেক্ষণ করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন। আর এ নীতিমালা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এসব কোর্সে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িক বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়।
কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অধিকাংশ শিক্ষক সান্ধ্য কোর্স চালু রেখে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের পক্ষে মত দেন।
সভায় উপস্থিত এক শিক্ষক বলেন, “একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অল্প সময়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলেও সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক হয়। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা যুক্তিতর্ক শেষে অবশেষে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে একাডেমিক কাউন্সিল।”