তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সমস্ত সমালোচনাকে অসার প্রমাণিত করে এবারের বাজেটও বাস্তবায়িত হবে।
শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি। এসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ ও জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, গত ১১ বছর একাধারে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশ এগিয়ে গেছে। দারিদ্র্য কমে অর্ধেকে নেমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ। পৃথিবীর অন্যতম সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হারের দেশে উন্নীত হয়েছি আমরা। একইভাবে এবারের বাজেটও বাস্তবায়িত হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এই বাজেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। পত্রপত্রিকায় দেখলাম এ লক্ষ্যমাত্রাকে বেশি বলে সমালোচনা হচ্ছে। ক ’দিন আগে আইএমএফ বলেছে, যদি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সহসা কেটে যায়, এবং বৈশ্বিক মন্দাও যদি সহসা দূর হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশের বেশি হতে পারে। আইএমএফ এর প্রাক্কলন বিবেচনায় নিলে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চয়ই উচ্চাভিলাষ নয়।
ব্যক্তি জীবনে যেমন অভিলাষ না থাকলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর তাগাদা থাকেনা, রাষ্ট্রীয় জীবনেও অভিলাষ থাকলেই জাতি এগিয়ে যায়, মন্তব্য করেন ড. হাছান।
করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রী একটি সাহসী বাজেট ঘোষণা করেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, পত্রপত্রিকায় অনেক মন্তব্য ও বিশ্লেষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিছু চিহ্নিত বিশেষজ্ঞ আছেন, তারা সবসময় মতামত দেন। আমরা দেখেছি, গত ১১ বছর ধরে যখনই বাজেট ঘোষণা হয়েছে, ততবারই সিপিডি কোনদিন বাজেটের প্রশংসা করতে পারেনি। প্রতিবারই তারা বলেছেন, বাজেট উচ্চাকাঙ্ক্ষী, বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু গত ১১ বছরের হিসেবে প্রতিববার বাজেট ৯৩ থেকে ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। বারবার ভ্রান্ত প্রমাণ হবার পরও তাদের সমালোচনায় একই ধারাবাহিকতাই বজায় রয়েছে।
১১ বছরে বাজেটের অংক সাড়ে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৬’শ ডলার। আজকে মাথাপিছু আয় সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়নের পর দেশের মানুষের জনপ্রতি উপার্জন হবে প্রতিবছর প্রায় দুই লক্ষ টাকা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কালো টাকা সাদা করার সিস্টেম চালু করেছিলেন বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তিনি নিজেও কালো টাকা সাদা করেছিলেন, তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেও কালো টাকা সাদা করেছিলেন। অর্থনীতির স্বার্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরণের অপ্রদর্শিত টাকাকে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়। বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদের উচিৎ সেই তথ্য ও উপাত্ত যাচাই বাছাই করা এবং আয়নায় নিজেদের চেহারাটাও একটু দেখার জন্য।
চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছেনা এবং চিকিৎসা না দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে, এবিষয়ে প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে এনিয়ে কয়েকটি সমন্বয় সভা হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। তবে শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারাদেশ এবং পৃথিবী জুড়েই আইসিইউ সঙ্কট আছে। ইতালি নিউইয়র্কের মতো দেশে বহু বয়স্ক মানুষ আইসিইউ সেবা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। তবে রোগী ফেরত দেয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। যেসমস্ত প্রতিষ্ঠান এভাবে রোগী ফেরত দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শনিবার থেকে প্রশাসন মোবাইল কোর্ট শুরু করবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্সও বাতিল হবে।
এসময় সাইফ পাওয়ার টেকের উদ্যোগে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ করেন তথ্যমন্ত্রী। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি, সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন এসময় উপস্থিত ছিলেন।