সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ ৬ বছর ধরে ঝুলে আছে। দীর্ঘ সময়ে এ বিষয়ে দুবার প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি, দুবার আইন মন্ত্রণালয় এবং একবার সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মত নেওয়া হয়। এছাড়া বিধিমালাটির ওপর সংশ্লিষ্টদের মতামতও নেওয়া হয়। এভাবে দিনের পর দিন শুধু ঘষামাজার মধ্য দিয়ে বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত । শিগগিরই গেজেট প্রকাশ হবে। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষ। তবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব খসড়া বিধিমালা আরেকবার দেখতে চেয়েছেন, বুঝতে চেয়েছেন কী জারি করা হচ্ছে। সেই কারণে একটু সময় লাগছে। শিগগিরই জারি হবে।
সরকারি চাকরি আইনের গেজেট প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। আইনটি কার্যকর করা হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে। এর আগে অধ্যাদেশ ও রাষ্ট্রপতির আদেশ সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিধিমালা জারি করে প্রশাসন পরিচালনা করা হয়েছে। সেহেতু এই আইন কার্যকর করার পর প্রশাসন পরিচালনায় আগের প্রায় সব বিধিমালা, নীতিমালা হালনাগাদ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এই আইনের অধীনে বেশ কয়েকটি বিধিমালা ইতোমধ্যে জারিও করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে।
সময়ক্ষেপণের বিষয়টিকে অবহেলা ও গাফিলতি হিসাবে দেখছেন সাবেক সচিবরা। তারা বলছেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে এবং কর্মকর্তারা সেই সুযোগ নিচ্ছেন। তারা বলেন, একটি বিধিমালা তৈরি করতে গিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর লাগার পরও সংশ্লিষ্ট কারও কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া হয়নি। আদৌ এই বিধিমালা প্রণয়ন হবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
আবার সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরির জন্য গত বছর ১৭ অক্টোবর উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ পদ্ধতিতে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের সম্পদের আয়-ব্যয় নেওয়ার বিধান করার কথা। সেন্ট্রাল সম্পদ হিসাব বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের ধারণাপত্র তৈরির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং বর্তমান মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের কয়েকদিনের মধ্যে তাকে সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি চলে যাওয়ার পর সেন্ট্রাল সম্পদ হিসাব বিবরণী সিস্টেমের ধারণাপত্র তৈরির কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সংশ্লিষ্ট যুগ্মসচিব মো. শামীম সোহেল বলেন, বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়টি আমি দেখতাম না। বিধিমালা তৈরির বিষয়টি দেখতেন যুগ্মসচিব সফিউল আরিফ। তবে সম্প্রতি তাকে বদলি করে দেওয়ায় এখন আমাকে দেখতে হচ্ছে। কিন্তু আচরণ বিধিমালা কী অবস্থায় আছে আমার জানা নেই।
জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করতে গিয়ে ৬ বছর সময় ব্যয় একটি অবহেলা। এটা দুঃখজনক। যত দ্রুত সম্ভব আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। তাছাড়া ১৯৭৯ সালের আচরণ বিধিমালার বিধান বলে কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার বা তা জমা দেওয়ার বিধান তো আছেই। তিনি আরও বলেন, সম্পদ হ্রাস বৃদ্ধির বিধান বিধিমালায় থাকা জরুরি। বরং প্রতিবছর সরকারকে জানানো উচিত কার কী পরিমাণ সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে।