সরকারি গাড়িতে করে আমদানি নিষিদ্ধ মাদক ফেনসিডিল পরিবহনের দায়ে রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. নুরুজ্জামান ও তার কথিত মাদক ব্যবসায়ী বন্ধু ওহিদুজ্জামান লাজুকের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম মামলাটি দায়ের করেন। শনিবার বিকেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা নুরুজ্জামানকে থানায় না নিতে দিনভর চেষ্টা তদবির চালালেও মামলা শেষে তাকে কারাগারে যেতেই হলো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, রাজশাহীর একটি সরকারি গাড়িতে ফেনসিডিল বহন করা হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা ব্রিজের টোল প্লাজায় চেকপয়েন্ট বসায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মো. নুরুজ্জামানকে সরকারি পাজেরো গাড়ি ড্রাইভ করা অবস্থায় ওই চেক পয়েন্টে আটক করা হয়। ওই সময় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা শিবগঞ্জ থেকে রাজশাহী ফিরছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, আটকের সময় সরকারি গাড়িতে চালকের পাশের সিটে বসেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আব্বাস বাজার গ্রামের ওহিদুজ্জামান লাজুক (৩৮)। তিনি পেশায় ওষুধের দোকানের কর্মচারী। তার পায়ের কাছে কোমল পানীয়র পাঁচটি বড় বোতলে ৬ দশমিক ৮ লিটার ফেনসিডিল ছিল। নুরুজ্জামান নিজেকে সরকারের উপসচিব এবং লাজুককে তার বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাজুক কোনো ওষুধের দোকানের কর্মচারীও নন। তিনি একজন মাদক চোরাকারবারি। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মাদকসেবীদের বাসায় তিনি মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, মো. নুরুজ্জামানের সরকারি গাড়িতে করে ফেনসিডিল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এসময় নুরুজ্জামান ওই গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। আটকের পর তিনি নিজেকে রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানান, আটকের পর লাজুককে জব্দকৃত ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নেওয়া হয়। আর নুরুজ্জামানের পরিচয় নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সার্কিট হাউসে নেওয়া হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে সরকারি কর্মকর্তারা নুরুজ্জামানকে রেখে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সার্কিট হাউস ত্যাগ করতে বলেন।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, নুরুজ্জামান সার্কিট হাউসে থাকাকালে সার্কিট হাউজের গেটগুলোতে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সারা রাত অবস্থান করেন। সরকারি কর্মকর্তারা তাকে (নুরুজ্জামান) ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন এবং অকথ্য ভাষায় কথা বলেছেন। সরকারি শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পর নুরুজ্জামানকে সার্কিট হাউস থেকেই সরাসরি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন বলেন, পুলিশের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম এজাহার দাখিলের পর আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আটকের পরে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান, তাই তারাই আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। যে কারণে পুলিশ মামলার আগ পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
এদিকে আটকের পর মো. নুরুজ্জামানকে থানায় না নেওয়া সম্পর্কে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, সরকারের স্থানীয় কর্মকর্তাদের চাপে আটক বিএসসি ক্যাডার কর্মকর্তাকে থানায় সোপর্দ করা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে আটকের পর স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের থেকে পরিচয় নিশ্চিত করতে মো. নুরুজ্জামানকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কিট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর সরকারি কর্মকর্তারা তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেননি। দুপুরে থানায় মামলার আগ পর্যন্ত আটক নুরুজ্জামানকে সার্কিট হাউসেই ছিলেন।
আরো পড়ুন: কনকনে শীতে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল নবজাতকটি, উদ্ধারের পর হাসপাতালে
অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি। আইনের তার নিজস্ব গতিতে চলেছে। আইনের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার কারো নেই। তবে দুপুরে মামলার আগ পর্যন্ত মো. নুরুজ্জামান সার্কিট হাউসেই ছিলেন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে থানায় নিতে সার্কিট হাউসে ছিলেন বলে স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক।
রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, রাতে টেলিভিশনে মো. নুরুজ্জামানকে আটকের খবর দেখেছি। এরচেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ আমাকে কিছু জানাননি।