করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তে ব্যাপক লুটপাটের সুবিধার্থে সরকার ‘মেগা প্রকল্প’কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন।
তিনি বলেন, “দেশের স্বাস্থ্যখাত তাদের (সরকার) প্রায়োরিটিতে নেই। তারা এই জায়গাটাতে কোনো প্রাধান্য দেয় না। তাদের প্রধান্য একটাই যে, তারা মেগা প্রকল্প তৈরি করবে এবং মেগা প্রকল্পে মেগালুট করবে এবং দুর্নীতির একটা মহোৎসব চলছে।
“দেখেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত কিট এখনো সরকার অনুমোদন দেয়নি। সব কিছুর পেছনে তাদের (সরকার) যে উদ্দেশ্যটা কাজ করেছে বা করছে সেই উদ্দেশ্যটা হচ্ছে দুর্নীতি। জনগণের সমস্যা সমাধান করার কোনো কাজ তারা করতে চাননি কখনো এবং করবেনও না।”
বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবের উদ্যোগে চিকিৎসক ও চিকিৎসক পরিবারকে সহযোগিতার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা সার্ভিস, মুমুর্ষ রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবারহ, প্লাজমা ডোনার তালিকা প্রণয়ন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা কার্য্ক্রম উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
বিএনপি মহাসচিব ইন্টারনেটের মাধ্যমে বক্তব্যের পর ড্যাবের মগবাজার অফিসের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ অন্যান্য কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। আজকের পত্রিকায় দেখলাম যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ধরনের প্যান্ডেমিককে যদি মোকাবিলা করতে হয় সবার কাছে যে জিনিসটা দরকার সেটা হচ্ছে সঠিক তথ্য। তারা সঠিক তথ্যটাও দিচ্ছে না, সঠিক তথ্য দেশের মানুষ সঠিকভাবে পাচ্ছে না।”
‘‘ আক্রান্তের ব্যাপারে দেখেছেন এই পরীক্ষা এতোটুকু পর্যাপ্ত নয়। এতো অপর্যাপ্ত যে সেটার সঠিক চিত্র তুলে ধরছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে যে তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে- শতকতরা ২৩ জন শনাক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ জনে ২৩ জন শনাক্ত হচ্ছে। পরীক্ষায় সরকারের কোনো সক্ষমতা নেই।”
দেশের অর্থনীতি ও জীবিকা সচল রাখতে বিএনপির দেয়া প্যাকেজ প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি প্যাকেজ দিয়েছি প্রথম দিকে যাতে করে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় এবং একই সঙ্গে জীবনকেও রক্ষা করা যায়। দুর্ভাগ্য আমাদের সরকার সেই বিষয়গুলোতে কোনো নজরই দেননি এবং তারা কোনো গোচরেও আনার চেষ্টা করেননি।
“কারণ আপনারা জানেন প্রথম দিকে তারা ত্রাণ শুরু করেছে, সেই ত্রাণে চুরি একটা মহোৎসব শুরু হয়েছে। কে কত চুরি করবে সেই কম্পিটিশন চলছিলো। এমন কি আপনার বিছানার তলে খাটের নিচে সোয়াবিন তেলের একেবারে আড়ত বসিয়ে দেওয়া- এই ধরনের ঘটনা আমরা পত্র-পত্রিকার মধ্যে দেখেছি।”
তিনি বলেন, এগুলোতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফরের সম্পৃক্ততাও মিলেছে। মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই কেনার ক্ষেত্রেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।
সংসদে উপস্থাপিত ২০২০-২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা দেখেছেন বাজেট দিয়েছে এই সময়ের মধ্যে। আমরা গোটা জাতি আশা করেছিলাম, এবারকার বাজেটটা আপদকালীন বাজেট, মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালগুলোকে ইকুপ্ট করা হবে।
“অক্সিজেনের জন্য মানুষ পাগল হয়েছে আছে কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যাবে। সিলিন্ডার নেই, আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটার নেই। এসব প্রথম থেকে বলা হয়েছে যে, এসব জরুরি ভিত্তিতে যোগাড় করা হোক, ব্যবস্থা করা হোক। তারা সেটার দিকে কেনো গরজ করেনি।”
ড্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. আবদুস সেলিমের পরিচালনায় ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিলসহ চিকিতসক নেতারা বক্তব্য দেন।