করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ঢাল হিসেবে নিয়ে হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
ত্রাণ চুরির সংবাদের জের ধরে সম্প্রতি দুই সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে বুধবার এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেছে বাম দলগুলো।
ত্রাণের চাল চুরির ঘটনার জেরে সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ঠাকুরগাঁওয়ের এক স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা।
অনলাইনে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করে মঙ্গলবার র্যাব গ্রেপ্তার করে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, জার্নালভিত্তিক সংগঠন দিদারুল ভূইয়া, ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ও ব্যবসায়ী মুশতাক আহমেদকে।
বাম জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকারের ক্রমবর্ধমান ব্যর্থতা ও ত্রাণ চুরির খবর ঢেকে রাখতেই নাগরিকদের মুক্ত চিন্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে কুখ্যাত নিবর্তনমূলক আইন ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, লেখক ও নাগরিকদের হয়রানি, গ্রেপ্তার ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলছে।
“নির্যাতন, নিপীড়ন, মিথ্যা মামলা ও কালো আইন প্রয়োগ, অপহরণ করে ব্যর্থতা ঢেকে রাখা যাবে না। এতে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ যেমন মানছে না, তেমনি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাজের সমন্বয়হীনতা এবং দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের ফলে দেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ক্রমাগত বেড়ে চলছে।
“গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ৫৪ জন জনপ্রতিনিধিকে ত্রাণ চুরির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, এদের প্রায় সকলেই সরকারদলীয় লোক।”
বাম জোট অবিলম্বে দিদারুল ভূঁইয়া, কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
মার্কেট-দোকান খুলে দেওয়া দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত: সিপিবি
বাংলাদেশে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, তখন ঈদের আগে আগামী ১০ মে থেকে দোকান-পাট ও শপিং মল খোলার যে অনুমতি দিয়েছে সরকার, তাকে ‘আত্মঘাতী ও দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি।
বুধবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত সিপিবির ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স টিমে’র এক সভায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ ছাড়াই মার্কেট, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকানপাট, শপিংমল খুলে দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সিপিবি নেতাদের উদ্ধৃত করে দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “করোনা মহাসংকট মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের পরামর্শ সরকারের কাছে এখন গুরুত্বহীন।
“মালিকের মুনাফার স্বার্থ ও চাপে, আমলাতন্ত্রের দাবি-পরামর্শ ইত্যাদির ওপরে নির্ভর করে সরকার গার্মেন্ট-কারখানার পর দোকান, মার্কেট, শপিংমল, ব্যবসাকেন্দ্র খুলে দেওয়ার মতো বিপজ্জনক ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
“এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যখন করোনা-সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। সরকারের এই আত্মঘাতী ও দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে।”
“অন্যদিকে গার্মেন্ট খোলার আগে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণে কথা বলা হয়েছিল, তার কিছুই হচ্ছে না। গার্মেন্ট কর্মীদের ব্যাপক হারে সংক্রমিত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। গার্মেন্ট-কারখানার পর দোকান-মার্কেট, ব্যবসাকেন্দ্র খুলে দিলে গোটা দেশই চরম বিপদের মধ্যে পড়বে,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় দলের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান লায়েক, মিহির ঘোষ, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আহসান হাবিব লাবলু, রুহিন হোসেন প্রিন্স, জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান অংশ নেন।