সরকার ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে: মির্জা ফখরুল

image-819649-1719160696

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। শুধু ভারত নয়, আশপাশের দেশগুলোর কাছে তারা (আওয়ামী লীগ) পুরোপুরি মাথা নিচু করে, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। মিয়ানমার থেকে গুলি আসে, জবাবটাও তারা দিতে পারে না। এরকম একটা অথর্ব নতজানু শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপর চেপে বসে আছে।

রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ফখরুল বলেন, তিনি (খালেদা) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিনি খালেদা জিয়াকে ‘হত্যা’ এবং রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না। গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চেয়েছেন। শর্তের (নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তির) যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করেছে সরকার।

তিনি বলেন, আজকে ভয়াবহ এই ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দীর্ঘকাল ধরে খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ রয়েছেন। সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি পুরোপুরি অবরুদ্ধ এবং বন্দি আছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারাগার থেকে তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ হয়েছেন। তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। তিনি বারবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার সেটা শোনেনি এবং তার সুচিকিৎসা করেনি। পরবর্তীকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তবে কোনো সুচিকিৎসা হয়নি। আজকে বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায়।

খালেদা জিয়ার যেসব রোগ আছে, তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হসপিটাল প্রয়োজন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দল, পরিবার, সুশীল সমাজ, এমনকি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি মিশনগুলো এই কথাগুলো বারবার বলেছে। বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই বলছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক। কিন্তু সরকার পাত্তাই দিচ্ছে না।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘তথাকথিত’ প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করে তিনি বলেন, যিনি নির্বাচিত নন, সেই ‘তথাকথিত’ প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে ১০টি চুক্তি করেছেন। কিন্তু আমাদের যে সমস্যাগুলো, আমরা যে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা পাচ্ছি না, সে ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্তু তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার জন্য, তাতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারত প্রস্তাব করেছে।

বিএনপি নেতা বলেন, কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির কাহিনি বেরিয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান (আজিজ আহমেদ) তার দুর্নীতির কাহিনি বেরিয়েছে। আবারও কয়েকজন পুলিশের দুর্নীতি কাহিনি বেরিয়ে আসছে। আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম যে, গত শুক্রবার পুলিশের অ্যাসোসিয়েশন থেকে একটা স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে হুমকি দিয়েছে, এই সত্য (পুলিশের দুর্নীতির খবর) প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এতে নাকি তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। আজকে সারা দেশের মানুষ জানে, সারা পৃথিবী জানে যে, পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য কীভাবে এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে।

দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, জলবায়ুবিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যুবদল নেতা মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীর আহসান, নাজমুল হাসান, জহির উদ্দিন তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Pin It