রেলে টিকিট বিক্রয়ে হয়রানি, অনিয়ম চরমে উঠেছে। টিকিট বিক্রয়ে ‘সহজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বারবার চুক্তিভঙ্গ করেও বহালতবিয়তে আছে। প্রতিষ্ঠানটির খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলপথ বিভাগের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
চুক্তিভঙ্গ করায় মঙ্গলবার রেলপথ বিভাগের বাণিজ্য বিভাগ থেকে পত্র পাঠিয়ে ‘সহজের’ কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে।
এদিকে টিকিট বিক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং ‘সহজডটকম’র চরম অব্যবস্থাপনা-অনিয়মের বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির আন্দোলনে ভুক্তভোগী এবং সাধারণ মানুষ সংহতি প্রকাশ করেছেন।
সহজের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং ভোক্তভোগী রনিকে ৫০ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে ভোত্তা অধিকার। খোদ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সহজের কারণে রেলের দুর্নাম হয়েছে। এমন অবস্থায় সহজের সঙ্গে রেলের চুক্তি বাতিল করা অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সহজ লিমিটেড (লিড পার্টনার), সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর বরাবর পাঠানো পত্রে বলা হয়েছে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আন্দোলনরত মহিউদ্দিন হাওলাদার রনি গত ১৩ জুন ঢাকা টু রাজশাহী সিল্কসিটি (নং-৭৫৩) এক্সপ্রেস ট্রেনে চারটি এসি টিকিট বুক করেন, যার অন-লাইন মূল্য ২৬৮০ টাকা। রনি তার মোবাইল নং ০১৭১৫৩০৪১৩১ থেকে বিকাশে উল্লিখিত টাকা ট্রানজেকশন করেন।
কিন্তু তিনি কাঙ্ক্ষিত সিট পাননি। পত্রে বলা হয়, যদি কেউ অনলাইনে টিকিটের জন্য টাকা পরিশোধ করে টিকিট না পান তাহলে রেলের সঙ্গে সহজের চুক্তি অনুযায়ী ১৫ মিনিটের মধ্যে সমপরিমাণ টাকা যথাযথ নিয়মে ফেরত দিতে হবে। যে কাজটি রনির ক্ষেত্রে ‘সহজ’ করেনি। এ ছাড়া যদি ট্রেনের আসন না থাকে তাহলে কোনো যাত্রীর ব্যালেন্স কর্তন করার অপশন নেই, থাকারও কথা নয়। কিন্তু এ ধরনের অভিযোগ হরহামেশা পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে সফটওয়্যারে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংশোধনী আনতে হবে।
সহজের অনলাইনে ক্রয়কৃত/বুকিংকৃত টিকিট, ট্রানজেকশন এবং রিফান্ডের সময়মীমা সংশোধ করে দ্রুত জানাতে হবে। একই সঙ্গে মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের বিষয়টি প্রয়োজনীয় ডাটালজিক, রেকর্ডসহ বিস্তারিত রেলকে জানাতে হবে। অনলাইন ট্রানজেকশন ও সিট রিলিজ, বুক, রিফান্ডের বিষয়টি বিস্তারিত প্রতিবেদনসহ আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সহজ বারবার চুক্তি ভঙ্গ করছে। দেশের বিভিন্ন স্টেশনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রমে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এতে আর্থিক হিসাব-নিকাশ স্পষ্ট করতে পারছে না রেল।
সূত্র আরও জানায়, পুরোনো টিকিটিং সংস্থা সিএনএস বিডিকে গত বছর বাদ দেওয়া হয়। পরে চুক্তি হয় সহজ ডটকমের সঙ্গে। কিন্তু এর পরও সাধারণ যাত্রীদের স্বস্তি মেলেনি। সহজ দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ঈদুল ফিতরের মতো কুরবানির ঈদেও টিকিট কাটায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহজের সঙ্গে রেলওয়ের চুক্তি হয়। ওই বছরের ২১ মার্চের মধ্যে অ্যাপ চালুসহ টিকিট বিক্রয়ের পুরো কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করে শতভাগ সেবা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে চুক্তিতে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি সহজ। এরপর ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। বলা হয়, ১৯ এপ্রিলের মধ্যে বিশেষ অ্যাপ এবং টিকিট বিক্রিয় কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে না পারলে ২০ এপ্রিল অটোমেটিক (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) সহজ ডটকমের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু এখনো চুক্তি বাতিল হয়নি।
জানা যায়, চুক্তি মোতাবেক প্রতি টিকিট বিক্রির বিপরীতে সহজ পাবে ২৫ পয়সা। পাঁচ বছরে ২০ কোটি টিকিট বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। সে হিসাবে সহজকে পাঁচ কোটি টাকা দেবে রেলওয়ে। সহজ তার দরপ্রস্তাবের সঙ্গে পাঁচ বছরে ২৫ কোটি টাকা রেলের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন বাবদ আয়ের শর্ত উল্লেখ করেছে।
জানতে চাইলে রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবির বলেন, সহজের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার জন্য রেলের দুর্নাম হচ্ছে। রেলের সঙ্গে সহজের চুক্তিভঙ্গের বিষয়গুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। তিনি বলেন, চুক্তির বাইরে কিছু করার অধিকার সহজ রাখে না। চুক্তিভঙ্গ কিংবা চুক্তির বাইরে কাজ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।