দেশের মাঠে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে আয়ারল্যান্ডকে হারাল লিটন কুমার দাসের দল।
শেষ ৩১ বলে প্রয়োজন ৩৩ রান। উইকেট বাকি ৮টি। দারুণ ফিফটি করে ক্রিজে তখনও লিটন কুমার দাস। ম্যাচ জয় তো স্রেফ সময়ের ব্যাপার। তবে সহজ ম্যাচ কঠিন করে তুলতে তো জুড়ি নেই বাংলাদেশের। এই ম্যাচেও গুবলেট পাকানোর আয়োজন তারা করে ফেলেছিল। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের শেষের ক্যামিওতে দূর হয় শঙ্কা।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামে শনিবার আয়ারল্যান্ড ২০ ওভারে তোলে ১৭০ রান। শেষ দিকের স্নায়ুক্ষয়ী সময় পেরিয়ে বাংলাদেশ জিতে যায় দুই বল বাকি রেখে।
তিনটি করে চার ও ছক্কায় ৩৭ বলে ৫৭ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ অধিনায়ক লিটন।
তবে পুরস্কারটি অনায়াসে পেতে পারতেন শেখ মেহেদি হাসানও। প্রথম ওভারে ১৩ রান দেওয়ার পরও চার ওভারে স্রেফ ২৫ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেন এই অফ স্পিনার। দলকে জয় এনে দেওয়া নান্দনিক চার আসে তার ব্যাট থেকেই।
তবে শেষ দিকের চ্যালেঞ্জে দল উতরে যায় একাদশে ফেরা সাইফের ৭ বলে ১৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে।
আগের ম্যাচের মতো আইরিশদের শুরুটা ছিল আগ্রাসী। একাদশে ফেরা শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম ওভারে তিনটি চার মারেন টিম টেক্টর। পরের ওভারে নাসুম আহমেদকে চার ও ছক্কা মারেন পল স্টার্লিং।
পরে সাইফ উদ্দিনের ওভারে দুটি চার একটি ছক্কা মারেন স্টার্লিং। তানজিম হাসানের বলে টিম টেক্টরের ছক্কায় পাঁচ ওভারেই রান পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ।
ওই ওভারেই সাইফ হাসানের দারুণ ক্যাচে শেষ হয় স্টার্লিংয়ের ইনিংস (১৪ বলে ২৯)। জুটি থামে ২৮ বলে ৫৭ রানে।
আইরিশদের রান অভিযান তাতে থামেনি। মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম ওভারে ছক্কা ও চার মেরে দেন টিম টেক্টর।
পাওয়ারে প্লেতে রান আসে ৭৫।
পাওয়ার প্লে শেষে রানের গতিতে টানে বাংলাদেশ। মেহেদি ও নাসুমের টানা দুই ওভারে আসেনি বাউন্ডারি। এই পথ ধরেই ধরা দেয় উইকেট। শেখ মেহেদি এক ওভারেই বিদায় করেন দুই টেক্টর ভাইকে।
২৫বলে ৩৮ করে স্টাম্পড হন টিম টেক্টর, জোরের ওপর করা বলে বোল্ড হয়ে যান আগের ম্যাচের নায়ক হ্যারি টেক্টর (১১ বলে ১১)।
শেখ মেহেদি পরের ওভারে ফেরান বেল কালিৎজেকও।
দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে রানের গতিও কিছুটা হারিয়ে ফেলে আইরিশরা। শেষ সময়ে যিনি দ্রুত রান তুলতে পারেন, সেই জর্জ ডকরেলকে হাত খুলতেই দেননি বোলাররা। শেষের আগের ওভারে আউট হন তিনি ২১ বলে ১৮ রান করে।
শেষ ওভারে মুস্কাফিজ একটি ছক্কা হজম করলেও বাকি পাঁচ বলে রান দেন কেবল দুই।
প্রথম ১০ ওভারে ৯৭ রান তোলা আয়ারল্যান্ড পরের ১০ ওভারে তোলে কেবল ৭৩। লর্কান টাকার অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৪১ রান করে।
বাংলাদেশের রান তাড়া শুরু হয় পারভেজ হোসেন ইমনের ঝড়ে। প্রথম ওভারেই চার ও ছক্কা মারেন তিনি। আগের ম্যাচে চার ওভারে ১৩ রান দেওয়া ম্যাথু হামফ্রিজ এবার প্রথম ওভারেই দেন ১২ রান।
তার সঙ্গী তানজিদ হাসান নিজের ভুলে রান আউট হয়ে যান তৃতীয় ওভারে। তবে পারভেজ ও লিটনের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে রান উঠে যায় ৬৬।
পরে রানের গতি কমলেও বাংলাদেশ ছিল নিয়ন্ত্রণেই। ৬০ রানের জুটি ভাঙে পারভেজের (২৮ বলে ৪৩) বিদায়ে।
পরের ওভারে আয়ারলান্ডের অসাধারণ দুটি ফিল্ডিং প্রচেষ্টার পরও রক্ষা পায় বাংলাদেশ। জশ লিটলের বলে কাভারে অসাধারণভাবে ডাইভ দিয়েও একটুর জন্য ক্যাচ নিতে পারেননি স্টার্লিং। সাইফ বেঁচে যান শূন্য রানে। পরের বলে লিটনের শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় সীমানায় ক্যাচে পরিণত করেন গ্যারেথ ডেল্যানি। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, ট্রাউজারের গুজে রাখা রুমাল স্পর্শ করে বাউন্ডারি বিজ্ঞাপনী টবলারে। ক্যাচের বদলে সেটি হয়ে যায় ছক্কা!
২৭ রানে ওভাবে রক্ষা পেয়ে সেই ডেল্যানির পরের ওভারেই চার ও ছক্কা মারেন লিটন।
অধিনায়কের ব্যাটে দল গিয়ে যাচ্ছিল হেসেখেলে। দাপুটে জয়ের ছবি স্পষ্ট হচ্ছিল ক্রমেই।
সেটিই ঘোলাটে হয়ে যায় লিটনের বিদায়ের পর। পরের ওভারেই বিদায় নেন সাইফ হাসান (১৭ বলে ২২)। তাওহিদ হৃদয় (৯ বলে ৬) ও নুরুল হাসান সোহান (৭ বলে ৫) দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ে বিদায় নেন দলকে চাপে ফেলে। ম্যাচ জমে ওঠে দারুণভাবে। আইরিশরা তখন বেশ উজ্জীবিত।
তবে ১০ বলে ১৪ রানের সমীকরণে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কা মেরে দলকৈ চাপমুক্ত করেন সাইফ উদ্দিন। এক বল পর আরেকটি চারে নিশ্চিত করে দেন ম্যাচের ভাগ্য। শেষ ওভারে নাটকীয় কিছু আর হয়নি।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭০/৬ (স্টার্লিং ২৯, টিম টেক্টর ৩৮, হ্যারি টেক্টর ১১, টাকার ৪১, কালিৎজ ৭, ডকরেল ১৮, ডেল্যানি ১০*; মেহেদি ৪-০-২৫-৩, নাসুম ৪-০-৩১-০, তানজিম ৩-০-১৭-১, সাইফ উদ্দিন ৪-০-৪০-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৯-০, সাইফ হাসান ১-০-৭-০)।
বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৭৪/৬ (পারভেজ ৪৩, তানজিদ ৭, লিটন ৫৭, সাইফ ২২, হৃদয় ৬*, সোহান ৫, সাইফ উদ্দিন ১৭*, শেখ মেহেদি ৬*; হামফ্রিজ ৪-০-৩৮-০, অ্যাডায়ার ৪-০-৩৬-২, ম্যাককার্থি ৪-০-২৭-০, লিটল ৩.৪-০-৩৯-০, ডেল্যালি ৪-০-২৮-২)।
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজের দুটি শেষে ১-১ সমতা।
ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন কুমার দাস।





