রংপুরে ডিও লেটারে স্বাক্ষর না দেওয়াকে কেন্দ্র করে রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদ এরশাদের ওপর দলীয় নেতা-কর্মীদের হামলা, চেয়ার ও টেবিল ভাংচুর করে জাপা নেতা-কর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার (২জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পল্লী নিবাসের মূল ভবনের সামনের বসে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন সাদ এরশাদ। এ সময় সাদ এরশাদকে উদ্দেশ্য করে ২৭ নং ওয়ার্ড জাপার সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান রংপুরী একটি ডিও লেটারে স্বাক্ষর না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় এমপি সাদ এরশাদের স্ত্রী ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের মাঝে হাতাহাতি ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় টিপু সুলতান নামে এক কর্মীকে গ্রেফতার করায় আরেক দফা হামলা করেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে আজ বুধবার (৩ জুন) পৃথকভাবে মহানগর জাতীয় পার্টি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পুত্র রাহগীর আল মাহী সাদ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এতে সাদ এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিও লেটারে (চাহিদাপত্র) স্বাক্ষর না করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মতবিনিময় সভায় হট্টগোল করে তাকে ও তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এঘটনায় স্থানীয় নেতাদের ইন্ধন রয়েছে।’
বুধবার (৩ জুন) বেলা দুইটার দিকে দর্শনার পল্লীনিবাসে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ এসব অভিযোগ করেন।
তিনি আরো জানান, ‘ঈদের পর মঙ্গলবার (২ জুন) সন্ধ্যায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছিলাম। সেখানে ডিও লেটারে স্বাক্ষর না দেওয়ায় তাকে ও তার স্ত্রীকে গালিগালাজ করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এসময় নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন এরশাদপুত্র।
বুধবার পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে করে হট্টগোলের ঘটনায় দু’পক্ষের বিপক্ষে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়। অপরদিকে ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিসহ আটক নেতাকে ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
দুপুর সাড়ে বারোটায় নগরী সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি অভিযোগ করেন, বহিরাগত ও ভাড়াটে গুন্ডাদের সাথে নিয়ে রংপুরে রাজনীতি করছেন সাংসদ সাদ এরশাদ। তার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী ২৭ নম্বর ওয়ার্ড জাপার সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানকে মারধর করেছে। অন্যায়ভাবে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করছে।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ আটক নেতাকে ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন সিটি মেয়র মোস্তফা। একই সাথে দ্রুত এর সুরাহা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জাপার নেতা-কর্মীরা।
এদিকে আটকের বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রোকনুজ্জামান আজ বুধবার বিকালে জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাপা নেতা টিপু সুলতানকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সাদ এরশাদ ও ৩২নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টি(এ) বাদী হয়ে পৃথক দুটি জিডি দায়ের করেছে। জিডিতে উভয় উভয়কে দোষারোপ করেছেন বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২ জুন) রাতে পল্লীনিবাসে ডিও লেটারে স্বাক্ষর না করায় রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদের ওপর হামলার চেষ্টা ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগে স্থানীয় নেতা টিপু সুলতানকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন সাদ এর লোকজন। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা পল্লীনিবাসের সামনে জড়ো হয়ে সাদ এরশাদকে গালমন্দ করে বিক্ষোভ করেন। এই বিক্ষোভ মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পল্লীনিবাস এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।