আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে কি-না, সেটা শুধু নেত্রী (শেখ হাসিনা) ও আল্লাহ জানেন। তিনি (কাদের) কিছু জানেন না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের মাইন্ড সেট নেত্রী ভালো করেই জানেন। কাউন্সিলররাও তাকিয়ে থাকবেন, নেত্রী কাকে চান। কীভাবে চান, কীভাবে নেতৃত্ব থাকবে। নতুন নেতৃত্বকে কোন মডেলে সাজাবেন। এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। একুশ তারিখ (শনিবার) পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দল ও সরকার আলাদা হচ্ছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দল ও সরকার কীভাবে আলাদা হবে? আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলেরও প্রধান, আবার সরকারেরও প্রধান। আমাদের বিকল্প আছে, কিন্তু নেত্রীর বিকল্প নেই।
সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই সম্মেলনের পর ‘মুজিববর্ষ’ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মত বড় এজেন্ডা আছে। যে কারণে এবারের সম্মেলনে প্যান্ডেল ও মঞ্চের বাইরে সাজসজ্জা বলতে তেমন বর্ণাঢ্য ও ফেস্টিভ কোনো লুক রাখা হয়নি। সম্মেলনের আয়োজন যা হয়েছে তা নেত্রীর নির্দেশেই হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা চলছে। এটি একটি ঐতিহাসিক আয়োজন। শীতের তীব্রতা যত বাড়ছে, সারাদেশে থেকে নেতাকর্মীদের ঢলও ততই বাড়ছে। সারাদেশ থেকে দলের অসংখ্য নেতাকর্মী শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতিকে দেওয়া দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে এবার নতুন নেতৃত্বে জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভিশনারি লিডার হিসেবে নেত্রী গত নির্বাচনে জাতির সামনে ভিশন ২০২১, ২০৪১ ও ২১০০ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেছেন। এগুলোই এখন এই সম্মেলনেরও লক্ষ্য হবে, মূল এজেন্ডা হবে। নেত্রীর প্রতিশ্রুতিগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। আর নেত্রীর ভিশন বাস্তবায়নের উপযোগী শক্তি হিসেবে নতুন-পুরাতন, ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তি মিলিয়ে একটা সুন্দর সমন্বয় করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো আওয়ামী লীগ পূরণ করবে। কিন্তু সেজন্য শুধু সরকার শক্তিশালী হলে হবে না। দলকেও শক্তিশালী থাকতে হবে। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করে একটা আধুনিক ও স্মার্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে জনগণের সামনে উপহার দেওয়া হবে।
সাম্প্রদায়িক শক্তির চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিজয়কে সংহত করার পথে কিছু কিছু বাধা আছে, চ্যালেঞ্জ আছে। জঙ্গিবাদ এদেশ থেকে চলে গেছে- এটা বলার উপায় নেই। তারা তলে তলে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এটাই আমাদের বিশ্বাস। সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তি আবারও সক্রিয় হতে পারে। এখনো ভেতরে ভেতরে তাদের শক্তি কাজ করছে। কাজেই সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ, তার মূলোৎপাটন করতে হবে। আর সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করাটাই জাতীয় সম্মেলনের অঙ্গিকার।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি কতটুকু সফল হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে। সফলতা-ব্যর্থতার বিষয়টি বিবেচনা করবেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। সর্বোপরি দেশের জনগণই এই সফলতা-ব্যর্থতার বিচার করবেন। তবে এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নবতর পথযাত্রার সূচনা করব।
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার টিম কতটা সফল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি সন্তুষ্ট। বিভাগীয় দায়িত্বে যারা নিয়োজিত ছিলেন, তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। গত এক মাসেই দলের ২৯টি জেলা সম্মেলন ও প্রায় ১৫০টির মত উপজেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত ট্রেনমার্চ ও কক্সবাজার পর্যন্ত রোডমার্চ করেছি। এই সাংগঠনিক তৎপরতা চলমান। সম্মেলনও চলমান প্রক্রিয়া। গতকালও (বুধবার) নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, জাতীয় সম্মেলনের পর মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন শাখার সম্মেলনগুলো শুরু করে ‘মুজিববর্ষের’ আগে শেষ করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় পর্যায়ে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা থাকবেন। তারাই সম্মেলনের এজেন্ডা ঠিক করে নেবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ প্রমুখ।