ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে দশ জনের দল নিয়ে পিছিয়ে পড়েও ড্র করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মালদ্বীপের সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে উঠল না স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল হজম করে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে প্রথম হারের তিক্ত স্বাদ পেল তারা।
বৃহস্পতিবার মালদ্বীপের রাজধানী মালের জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের কাছে ২-০ হেরেছে বাংলাদেশ। বিরতির পর হামজা মোহামেদ মালদ্বীপকে এগিয়ে দেওয়ার পর পেনাল্টি থেকে ব্যবধান বাড়ান গোটা ম্যাচে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানো আলী আশফাক।
শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফ শুরুর পর ভারতের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিলেন জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু মালদ্বীপের কাছে থেমেছে তাদের অপরাজেয় যাত্রা। গত মাসে বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব পাওয়ার পর তৃতীয় ম্যাচে এসে হারের দেখা পেলেন ব্রুজন।
তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশ আছে পাঁচ দলের আসরের পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে। জয় দিয়ে তলানি থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে মালদ্বীপ। তাদের পয়েন্ট দুই ম্যাচে ৩। শীর্ষে থাকা নেপালের সংগ্রহ দুই ম্যাচে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট।
প্রথমার্ধের শুরুর দিকে চালকের আসনে ছিল বাংলাদেশ। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মালদ্বীপ নিয়ে নেয় নিয়ন্ত্রণ। বিরতির আগের কয়েকটি মিনিটে টানা আক্রমণ চালিয়ে তারিক কাজী, তপু বর্মণ, ইয়াসিন আরাফাতদের ব্যতিব্যস্ত রাখে তারা।
দ্বিতীয় মিনিটেই গোলপোস্টে শট নেয় বাংলাদেশ। ডানপ্রান্তে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন বিপলু আহমেদ। কিন্তু তার ডান পায়ের গড়ানো শট সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক মোহামেদ ফয়সাল। নবম মিনিটে মিডফিল্ডার বিপলুর আরেকটি শট পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়।
২২তম মিনিটে অধিনায়ক জামালের কর্নার মালদ্বীপের রক্ষণভাগ প্রতিহত করার পর ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে যান উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তার ডান পায়ের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। চার মিনিট পর আলী ফাসিরের দূরপাল্লার শট পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোকে।
২৯তম মিনিটে রাইট ব্যাক সাদ উদ্দিনের দক্ষতায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। সংঘবদ্ধ আক্রমণে ডি-বক্সের ভেতরে মালদ্বীপের তারকা ফরোয়ার্ড আশফাক আড়াআড়ি পাস দিয়েছিলেন হুসাইন নিহানকে। তার নেওয়া শট দারুণভাবে ব্লকড করেন সাদ। আট মিনিট পর বাম প্রান্তে নিহানের পাস পেয়ে ইব্রাহিম মউদুদি বল ফেলেছিলেন ছয় গজের বক্সের মধ্যে বিপজ্জনক জায়গায়। কিন্তু সেখানে ছিলেন না মালদ্বীপের কোনো খেলোয়াড়।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে আশফাকের বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিকে ফাসিরের শট রহমত মিয়ার গায়ে লেগে ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। যোগ করা সময়ে আশফাকের আরেকটি ফ্রি-কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন জিকো।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশকে একেবারে চেপে ধরে মালদ্বীপ। স্বাগতিকদের একের পর এক আক্রমণ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। খোলসে বন্দি হয়ে পড়ে ম্যাচে ফেরার অবস্থা তৈরি করতে পারেনি তারা।
৫৩তম মিনিটে ফাসিরের দূর থেকে নেওয়া জোরালো শট অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকান গোলরক্ষক জিকো। কিন্তু দুই মিনিট পর আর জাল অক্ষত রাখতে পারেননি তিনি। মালদ্বীপের কর্নার পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে না পারলে বল পেয়ে হেড করেন নিহান। এরপর দর্শনীয় বাইসাইকেল-কিকে নিশানা ভেদ করেন হামজা।
৭০তম মিনিটে জামালের দূরপাল্লার শটে ডি-বক্সের ভেতরে ফ্লিক করেছিলেন মতিন মিয়া। তবে তার প্রচেষ্টা খুঁজে পায়নি জালের ঠিকানা। দুই মিনিট পর বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার রাস্তা ভীষণ কঠিন হয়ে যায়। নিজেদের অর্ধ থেকে বল পেয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে একক নৈপুণ্যে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন নাইজ হাসান। সোহেল রানা তাকে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট-কিক থেকে ঠাণ্ডা মাথায় জিকোকে পরাস্ত করেন আশফাক।
চার মিনিট পর আরও পিছিয়ে পড়তে পারত বাংলাদেশ। তবে আশফাকের পাসে ফাসিরের শট ফাঁকি দিতে পারেনি জিকোকে। ৭৮তম মিনিটে বদলি স্ট্রাইকার সুমন রেজার শট অনায়াসে গ্লাভসবন্দি করেন গোলরক্ষক ফয়সাল। পরের মিনিটে ডি-বক্সের ভেতরে আশফাকের কাট-ব্যাকে হামজার শট ব্লক করেন তারিক।
৮৩তম মিনিটে মালদ্বীপের বদলি মোহামেদ উমাইরের ফ্রি-কিক লক্ষ্যে থাকেনি। ম্যাচের যোগ করা সময়ের একদম শেষ মুহূর্তে ব্যবধান কমানোর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বদলি মিডফিল্ডার জুয়েল রানার পাসে মতিনের শট পোস্ট ঘেঁষে চলে যায়।
এই হারে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার পথ কঠিন হয়ে পড়ল বাংলাদেশের। আগামী ১৩ অক্টোবর একই ভেন্যুতে লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে তারা।