পবিত্র কোরবানি ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। কিন্তু এখনো মসলার বাজারে দেখা যাচ্ছে না ক্রেতাদের ভিড়। অথচ প্রতি বছর এই সময়ে মসলার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় থাকত চোখে পড়ার মতো। দামও থাকত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু এ বছর দামও বাড়েনি এই পণ্যটির।
ব্যবসায়ীরা বলছেন-করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্রেতা নেই। তার ওপর আবার বিভিন্ন স্থানে বন্যা। এসব কারণে মানুষের কাছে টাকা-পয়সা নেই, চাহিদাও নেই। প্রতি বছর এই সময়ে যা বিক্রি হতো এ বছর তার চার ভাগের এক ভাগও হচ্ছে না। রাজধানীর মৌলভীবাজার, কাওরানবাজার, মিরপুর-১ শাহ আলী মার্কেট, শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে গিয়ে দেখা যায়-পাইকারি দারুচিনি কেজি ২৮০ থেকে ৩৪৫ টাকা; খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। আদা পাইকারি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১২০ টাকা; খুচরা তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। এলাচ কেজিতে এক হাজার টাকা কমে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ থেকে ২৭০০ টাকায়। জিরা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা আর আফগান জিরা ৪০০ টাকা কেজি। সাধারণমানের জিরা খুচরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। পাইকারি প্রতি কেজি লবঙ্গ ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। খুচরা কেজি এক হাজার টাকা। গোলমরিচ পাইকারি কেজি ৪২০-৪৫০ টাকা। পাইকারি তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকায়, খুচরা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া পেঁয়াজ দেশি ভালোমানের ৩৬ টাকা; খুচরা তা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, রসুন পাইকারি পাঁচ কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, খুচরা কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
তবে ক্রেতাদের দাবি, করোনা মহামারির শুরুর দিকেই বিশ্ব বাজারে অধিকাংশ মসলার দাম অনেক কমে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় দেশে দাম ততটা কমেনি। ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে বলেছিলেন, ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মসলার দাম কমাবে। তবে সত্যিকারে সেই হিসেবে দাম কমেনি।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজার করতে আসা আনিসুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। সব কিছুর দামই কম থাকার কথা। শুনেছি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে। কিন্তু দেশে সেই হারে কমেনি।’
তবে খুচরা ক্রেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ পাইকারি মসলা ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব মো. আতিকুল হক বলেন, ‘এবার তুলনামূলকভাবে দাম কমই। কারণ করোনার কারণে বিশ্ব বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। আর খুচরা বাজার মসলা সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে না। তাই খুচরা বাজারে দাম বেশি থাকলেও সমিতির কিছু করার থাকে না।’
আরো পড়ুন: শিবচরে চিফ হুইপের ব্যক্তিগত অর্থায়নে করোনা আইসোলেশন কেন্দ্র চালু
এলাচের দাম এখনো স্বাভাবিক দামের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ থাকার কারণ কি এমন প্রশ্নের জবাবে রাজধানীর মৌলভীবাজারের এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘বন্যার কারণে এলাচ রপ্তানিকারক দেশ ভারত গত বছর গুয়েতেমালা থেকে এলাচ আমদানি করে। তাই বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এখন দাম অনেক কমে গেছে। সরাসরি যারা আমদানি করেন তারা ২১০০ থেকে ৩০০০ টাকায় কেজি বিক্রি করেন। তবে হাত বদল হতে হতে দাম কিছুটা বেড়ে যায়। আর নতুন করে এখন এলাচ আমদানিও হচ্ছে না। আগে বেশি দামে যারা কিনেছেন তারা এখনো বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে জিরা ও দারুচিনি আমদানির চেয়ে কম দামে অর্থাৎ লস দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
কাওরান বাজারের মসলার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এ-রাইট’র মালিক হাজি আ. মতিন ও হাজি আ. খালেক বলেন, ‘গত বছর এমন দিনে এত বেশি বেচা-বিক্রি ছিল যে, শ্বাস ফেলানোর সময় ছিল না। কিন্তু এখন পাইকার কম। বিক্রি নাই বললেই চলে। সারা দেশেই মসলার বাজার খারাপ।’
মেরুল বাড্ডার মুদিদোকানি মো. শামসুল ইসলাম বলেন, ‘মসলার দাম একটু কমেছে। তবে বিক্রি নাই। প্রতি বছর এই সময়ে মসলাসহ পোলাউর চাল বেশ বিক্রি হতো। এখন কাস্টমার নাই। অনেকে বাড়ি চলে গেছেন। অনেকের কাছে টাকা নাই। তাই হয়ত কিনছেন না।’
গত ১৩ মে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করে গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতি ঘোষিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী-জিরা (ভারতীয়) প্রতিকেজি ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা, দারুচিনি (চীন) প্রতিকেজি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা, দারুচিনি (ভিয়েতনাম) প্রতিকেজি ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা, লবঙ্গ প্রতিকেজি ৬৮০ থেকে ৭২০ টাকা, এলাচ প্রতিকেজি ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা, গোলমরিচ (সাদা) ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা, গোলমরিচ (কালো) ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা।