সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর দিক এড়াতে

social-media-reuters-07112024-1730966047

রাগ-ক্ষোভ জন্ম দেয়- এরকম বিষয় ‘ভাইরাল’ হয়। তাই এগুলো এড়াতে জানতে হবে।

হতাশা, হাহাকার বা মনের ওপর বাজে প্রভাব ফেলে এরকম বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে দেখতে মন বিষিয়ে উঠছে কি?

হয়ত ভাবছেন ফেইসবুক বা এই ধরনের অ্যাপগুলো ক্ষতিকর।

তবে সান ফ্রানসিসকো’র ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র শিশুরোগ-বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেসন নাগাটা বলেন, “সাধারণভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ভালো বা খারাপ বলা যাবে না।”

সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে থাকা যায়। আবার হীনমন্যতা এবং একাকী বোধের জন্মও দিতে পারে।”

আর এখানেই আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজে কী ধরনের পরিবেশ তৈরি করছেন- সেই ব্যাপারটা।

নিউ ইয়র্ক সিটি’র ‘কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেইলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের মহামারী বিষয়ক অধ্যাপক ডা. ক্যাথরিন কিইজ বলেন, “কী ধরনের পরিবেশ তৈরি করছেন সেটার ওপর বিশাল পার্থক্য তৈরি হয়।”

তার কথায়, “ভিন্নতর এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হতে পারে বাসায়, স্কুলে, যেখানে সময় কাটানো হয় সেখানে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।”

নিজের জীবন ও সময়ের সাথে সমন্বয় করে ইতিবাচক পন্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকাটা জরুরি। আর মান সম্মত বিষয়গুলো চোখের সামনে যাতে আসে সেজন্য কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করা যায়।

আসলে কী চান সেটা বুঝে সময় দেওয়া

যে ধরনের বিষয় বেশি দেখা হবে সে ধরনের বিষয়গুলো বেশি বেশি চোখের সামনে আসবে।

বেশিরভাগ সোশাল মিডিয়ার ‘অ্যালগারিদম’ এভা্বেই করা। কী খোঁজা হচ্ছে, কোন ধরনের বিষয়ে মন্তব্য বেশি করছেন বা দেখছেন- সেসব ধরেই একই ধরনের ‘পোস্ট’গুলো আসতে থাকে।

‘লোয়োলা ইউনিভার্সিটি মেলিল্যান্ড’য়ের বাজারজাতকরণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মারি ইয়েহ এই বিষয়ে বলেন, “এটাকে সমস্যা হিসেবে না নিয়ে বরং যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে হবে। খুব্ই সরল পন্থা হল: আপনি এই একটা বিষয় পছন্দ করেছেন, তাহলে একই ধরনের আরও জিনিস আপনাকে ‘খাওয়া’তে থাকবে।”

সচেতন হওয়াটা কষ্টকর হলেও, এক্ষেত্রে সেটা মানা দরকার আছে।

কী খুঁজছেন সেটা জানুন

কোনো কারণ ছাড়াই ফোনটা নিয়ে ফেইসবুক বা ইন্সটাগ্রাম এক পলক দেখে রেখে দিলেন। তারপর দেখা গেল কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক জিনিস বারবার আসতেছে।

এটা খুবই সাধারণ অভিজ্ঞতা- মন্তব্য করেন ‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের মানসিক ও আচরণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. অ্যানা লেমবেক।

তিনি বলেন, “এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও মানুষের মস্তিষ্কের সাথে মিলিয়ে কাজ করে।”

সুন্দর বিষয়, দারুণ রঙিন ছবি বা ভিডিও, চিত্ত আনন্দ তৈরি করে এমন শব্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ এসব দেখার সময় মস্তিষ্কে ‘ডোপামিন’ নিঃসরণ হয়, যা ‘ভালো অনুভূতি’র হরমোন নামেও পরিচিত।”

এই হরমোন স্বভাব, নড়াচড়া, উৎসাহ, নেশা ও প্রেম’য়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যখন এই ভালো অনুভূতি পুরষ্কার পাওয়ার মতো আনন্দ দেয়, তখন সহজেই উত্তেজনাকর বিষয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়তে হয়। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ‘অ্যালগারিদম’ সেই অনুযায়ী নানান বিষয় চোখের সামনে উপস্থাপন করতে থাকে। ফলে সচেতনভাবে বিষয়বস্তু বাছাই করার সিদ্ধান্তটা আর নেওয়া হয় না।

তাই কী খুঁজছেন সেই বিষয়ে নিজেকে আগে পরিষ্কার থাকতে হবে। এপর ব্যক্তিগত ও মানসিক শক্তি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই নির্দিষ্ট বিষয়টি কি দেখবেন নাকি এড়িয়ে যাবেন।

কোন বিষয়টা এড়াচ্ছেন সেটা জানা

পাশাপাশি এটাও জানা জরুরি, কোনো ধরনের বিষয়গুলো সরিয়ে দিচ্ছেন বা ‘সোয়াইপ’ করছেন। কারণ অনেক ধরনের বিষয় থাকে যেগুলো দেখা উপকারী নয়।

নাগাটা বলেন, “যেসব বিষয় নিজের জীবনের সাথে তুলনা তৈরি করবে সেগুলো সচেতনভাবেই এড়ানো উচিত।

“গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলনামূলক বিচার করে, পাশাপাশি নিজের ছবি বা পোস্ট নিয়ে মনক্ষুণ্ন হয় তাদের মধ্যে খাবার খেতে ইচ্ছে না হওয়া, বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দেয়। আর এটা বেশি ঘটে নারীদের মধ্যে”- বলেন তিনি।

সেন্ট. লুইস’য়ে অবস্থিত ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের মনোরোগের অধ্যাপক ডা. প্যাটরিসিয়া কাভাজোস-রেহগ বলেন, “তুলনা করা এবং অস্বাস্থ্যকর সৌন্দর্যের মাপকাঠি বিবেচনা করার বিষয়টা যাদের ‘ফলো’ করছেন তাদের থেকে আসে না। বরং তাদের দেখছেন আর সেই হিসেবে নিজেকে গড়তে চাচ্ছেন, সেটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।”

সব ব্যায়াম, খাবার, মেইকআপ বা ফ্যাশন যে খারাপ তা নয়। তবে নিজের সঙ্গে কোনটা মানানসই সেটা বোঝার মতো জ্ঞান নিজেকেই তৈরি করতে হবে। অন্যের ডায়েট অনুসরণ করলে যে, তার মতো হয়ে যাবেন, এমন ভাবা যাবে না। বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভর না করে নিজের জন্য কোনোটা উপযুক্ত সে বিষয়ে সরাসরি বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হবে- পরামর্শ দেন এই মনোবিজ্ঞানী।

আনফলো, হাইড বা ডিলিট

আর প্রধান ও চূড়ান্ত কাজ হল যাদের ‘ফলো’ করছেন তাদেরকে ডিলিট করা।

“মনে হতে পারে এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু করছে। তবে কথার মারপ্যাচ আর অযাচিত দ্বন্দ্ব- এই দুটি বিষয়ের মাঝে মোটা দাগে পার্থক্য রয়েছে”- বলেন ডা. প্যাটরিসিয়া কাভাজোস-রেহগ।

তিনি আরও বলেন, “এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যেসব ‘কনটেন্ট’ রাগ ক্ষোভ তৈরি করে সেগুলো ‘ভাইরাল’ হয়। তাই এগুলো ‘হাইড’ করতে হবে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহাকরীদের এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে, কী খুঁজছেন সেসবে ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শ দেন এই অধ্যাপক।

Pin It