সারাদেশে ‘রোড শো’র পর বিজয় দিবসে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি

mirza-fakhrul-bnp-291125-1764427642

চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শুরু হবে বিএনপির এই কর্মসূচি।

বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই সপ্তাহের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি; সারাদেশে ‘বিজয় মশাল রোড শো’র পর বিজয় দিবসে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে মহাসমাবেশে শেষ হবে এই কর্মসূচি।

শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয়ের মাস উদযাপনের এই কর্মসূচি তুলে ধরেন।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে ‘বিজয় মশাল রোড শো’ ও আলোচনা সভা চলবে, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে শেষ হবে ‘বিজয় মশাল রোড শো’।

গত বছরের ৫ অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। পাল্টে যাওয়া বাংলাদেশে আরেকটি বিজয় দিবস উদযাপনের আগে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “১৯৭১ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। কালুরঘাট আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য অংশ। এই ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকেই শুরু হবে এবারে বিএনপির বিজয় মাস উদযাপনের কর্মসূচি।”

তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বিজয় মশাল যাত্রা শুরু করবে, একইদিন তা চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যানে পৌঁছবে। মশাল বহন করবেন একাত্তরের একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং চব্বিশের একজন জুলাই যোদ্ধা।

“আমরা মনে করি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল দেশের স্বাধীনতা অর্জনের এবং ২০২৪ সালে হল দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিজয় মশাল রোড শো’ ও সমাবেশ চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরে হবে। প্রতিটি বিভাগে মশাল বহন করবেন একাত্তরের একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০২৪ সালের একজন জুলাই যোদ্ধা।”

‘ঢাকায় মহাসমাবেশ’

এই বিশেষ ‘রোড শো’ উদযাপনের সময় বিভিন্ন বিভাগে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বিস্তারিত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল।

এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, জাতীয় সংগীত, মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের নির্বাচিত অংশ প্রচার, জাসাসের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একই সঙ্গে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে একটি নিরাপদ সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি। এই পুরো আয়োজনে বিএনপির থিম সং ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ এই গানটি গাওয়া হবে। দেশের সকল বিভাগ ঘুরে বিজয় মশাল সবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে পৌঁছাবে।

একই দিন ঢাকার মানিক এভিনিউতে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিজয় মাসের বিজয় মশাল রোড শো।”

‘তারেক রহমানের পোস্ট প্রসঙ্গে’

এদিন সকালে তারেক রহমান তার ফেইসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন তা নিয়ে এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, “এ বিষয়ে আমার উত্তর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ উনি নিজে তার ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। এরপরে আর আমার কথা এখানে আলাদা করে কিছু বলার নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সাধারণ সম্পাদক একে এম কামরুজ্জামান নান্নু এবং দলের রোড শো কর্মসূচি উদযাপন কমিটির জুবায়ের বাবু উপস্থিত ছিলেন।

‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা তিন দিন ধরে একই পর্যায়ে’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা গত ৩ দিন ধরে একই পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, উনাকে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তিনি তা গ্রহণ করতে পারছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ পেলেই তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।
জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যৌথভাবে আলাপ করছি। এর ভিত্তিতেই তার চিকিৎসা অব্যাহত আছে এবং থাকবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সব বিষয়ে সমন্বয় করছেন। নেতাকর্মী, পরিবারের সদস্য, মেডিকেল বোর্ড- সবার যৌথ সহযোগিতায় চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
হাসপাতালে সবাইকে এসে ভিড় না করতে অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এটি একটি হাসপাতাল। খালেদা জিয়া ছাড়া এখানে আরও ৩০০ রোগী রয়েছে। তাদের চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয়। হাসপাতালে যথাসম্ভব কম ভিড় করবেন। চিকিৎসকদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
সর্বশেষ অবস্থা ও বিদেশে পাঠানো প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক বলেন, দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই। চিকিৎসার দায়িত্ব হাসপাতালের। ভালো করার মালিক আল্লাহ। তবে যতটা ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড দেশের বাইরে নেওয়ার পরামর্শ দিলে জানানো হবে। খালেদা জিয়ার অবস্থা গত তিন দিন ধরে একই পর্যায়ে আছে। চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন। বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি মেডিকেল বোর্ড ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
Pin It