সাহায্য করতে চাই, কিন্তু কোনো প্রস্তাবই পাইনি: মাশরাফি

mash-151221-04

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান নানা সময়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, মেন্টর বা যে কোনো ভূমিকায় জাতীয় দলে সম্পৃক্ত হতে পারেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু বাস্তব উদ্যোগ কতটা নেওয়া হয়েছে? সেই কৌতূহল মেটালেন মাশরাফি। সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বললেন তার মাঠে ফেরা, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক ও সবসময়ের নানা বাস্তবতা এবং প্রাসঙ্গিক আরও অনেক কিছু নিয়ে।

 ড্রাফটের বাইরে ক্রিকেটার নেওয়ার সুযোগ থাকবে সম্ভবত। কোনো দল যোগাযোগ করেছে?মাশরাফি: নাহ, আমার সঙ্গে কারও কথা হয়নি।আপনার প্রস্তুতি এমনিতে কেমন? ফিটনেস মানে তো শুধু ওজন কমানোই নয়, আরও ব্যাপার আছে। বোলিং স্কিল অনুশীলনের ব্যাপারও আছে…

মাশরাফি: যেহেতু বায়ো-বাবলের ব্যাপার আছে (সিরিজ ছিল জাতীয় দলের), হুটহাট করে তো মাঠে যেতে পারি না। আর বাংলাদেশে বা ঢাকায় এমন কোনো জায়গা নেই যে খেলোয়াড়রা আলাদা করে অনুশীলন করবে। ওই কারণে এখনও শুরু করিনি।

তবে, দেখা যাক। এই মাসের শেষের দিক থেকে ইচ্ছা আছে বোলিং শুরু করার। আমার দিক থেকে সবসময় যেটা চ্যালেঞ্জ থাকে, সেটা হলো ফিটনেস। একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হলো আগে (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ), তখন খেলিনি, কারণ ফিটনেস ঠিক ছিল না।

ওই সময়ই আমার মনে হলো যে, প্রস্তুত থাকা উচিত। কারণ করোনার সময় সুযোগ পেলে বিসিবি হুট করেই টুর্নামেন্টগুলো করবে। আমার প্রস্তুত থাকা নিজেরই নিশ্চিত করা উচিত। এজন্যই শুরু করেছি। আশা করছি, বিপিএল শুরু হতে হতে প্রস্তুত হয়ে যাব।

এখন কি শুধুই বিপিএল খেলবেন?

মাশরাফি: নাহ, ঢাকা লিগ অবশ্যই। বিপিএল তো আছেই, আরও বেশি ফোকাস আমার ঢাকা লিগে। ওয়ানডে ফর‌ম্যাটে হলেও, যেটা আমি খেলে আসছি।

কেন ঢাকা লিগে বেশি ফোকাস?

মাশরাফি: আমার ক্যারিয়ার শুরু এটা দিয়ে। আর এমনিতেও ঢাকা লিগের আলাদা চার্ম আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এই পর্যন্ত এনেছে এই টুর্নামেন্ট। যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় এখানে, এটার আলাদা একটা মজা আছে। আমি নিশ্চিত, আপনাদেরও এটা ভালো লাগে।

বিপিএলের আলাদা আবেদন আছে। ঢাক-ঢোল বাজে, গান-বাজনা হয়, অনেক কিছু হয়। টাকাও আছে। তবে ঢাকা লিগের আবেদন প্রতিটি ক্রিকেটারের কাছে আলাদা।

আপনি খেলার কথা বলছেন। কিন্তু মাঠের বাইরে আপনাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, বিসিবি সভাপতি খেলার বাইরে আপনার নানা ভূমিকার কথা বলছেন, আপনার জন্য বোর্ডের দুয়ার খোলা, এসব বলছেন। আপনার সঙ্গে তার আলোচনা এটা নিয়ে কতটা হয়েছে?

জাতীয় দলে কাজ করার সুযোগ খুব বেশি দেখেন না মাশরাফি, তার আগ্রহ জাতীয় দলের জন্য ক্রিকেটার তৈরি করায়।

মাশরাফি: দুয়ার খোলা বা বন্ধ নিয়ে কোনো আলোচনা এখনও হয়নি। এটা হলো সত্যি কথা। পাপন ভাইয়ের সঙ্গে যতটা কথা হয়েছে… যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়েছে, সেটা গোপনই রাখা উচিত। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সম্পর্কিত কিছু আলোচনা হয়নি। সুনির্দিষ্ট বা আলাদা করে বলার মতো কিছু হয়নি। একেবারে কমন জিনিস, গভীর কিছু না। সুনির্দিষ্ট করে যদি পয়েন্ট আউট করতে বলেন যে ওইখানে আমি ইনপুট রাখতে পারি, সেরকম কোনো আলোচনা হয়নি।জাতীয় দলের কথা বাদ দেওয়া গেল, কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে আপনি কিভাবে কাজে লাগতে পারেন, এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি?

মাশরাফি: না না, আমার ভূমিকা কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। সুনির্দিষ্ট করে কিছু যে ‘তুমি এখানটায় কি মনে করো’ বা বদল কিছু করা, এরকম আলোচনাই হয়নি। স্রেফ ‘কী অবস্থা’, ‘কী খবর’, এই ধরনের কথাই হয়েছে। সিরিয়াস ইস্যু কিছুই হয়নি।

কিন্তু বিসিবি সভাপতি তো ক্রমাগতই বলছেন। বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে এতে… মাশরাফিকে বলা হচ্ছে, কিন্তু তিনি আসছেন না বা এরকম কিছু…

মাশরাফি: হয়েছে কী, যখন মিডিয়া প্রশ্ন করে, তখন হয়তো বলতে হয় বলার খাতিরে। উনার জায়গায় আমি হলেও হয়তো বলতাম যে মাশরাফির দরজা খোলা। আমার তো মনে হয় না, আমি কখনও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি… ক্রিকেটার হয়তো বড় নাও হতে পারি, তবে না কখনও দলের ক্ষতিকারক কিছু করেছি, না কোনো ফিক্সিং ইস্যুতে জড়িত, না কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত, তাই দুয়ার আমার জন্য খোলা থাকারই কথা।

তবে সত্যি বলতে, আমি এমন একটা প্ল্যাটফর্মে আছি, আমি তো বলতে পারব না কিছু। ক্রিকেট বোর্ড চিন্তা করবে যে তারা আমাকে কোন জায়গায় কাজে লাগাতে চায়।

মানে, আপনি নিজে গিয়ে তো বলতে পারেন না যে ‘আমি কাজ করতে চাই’, তাদেরকে কাজটা দিতে হবে, এই তো?

মাশরাফি: সেরকমই। জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করাকে কখনই প্রাধান্য দেই না আমি। আমার কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতীয় দলের সঙ্গে কী কাজ করব! জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করার জায়গা নেই বলেই মনে করি।

তারপরও যদি সুনির্দিষ্ট করে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়, অবশ্যই তা বিবেচনা করব।

জাতীয় দলের বাইরে বলতে কোন জায়গায় কাজ করতে চান?

দলকে সাহায্য করতে চান মাশরাফি, তবে বোর্ড থেকে কোনো প্রস্তাব পাননি।

মাশরাফি: অনেক জায়গা আছে, অনেক কাজ করার আছে। জাতীয় দল নিয়েই কাজ করার জায়গা নেই, আমরা ভুল ধারণা নিয়ে দৌড়াচ্ছি।

একটা উদাহরণ দেই, জয় (মাহমুদুল হাসান) এসে ওপেন করছে টেস্ট ক্রিকেটে। এর আগেই তো ওকে নিয়ে অনেক কাজ করার ছিল। সে যেন প্রস্তুত হয়ে টেস্টে নামে, এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাইফ হাসানকে টি-টোয়েন্টিতে নামানো হলো, সে প্রস্তুত কিনা… এসব নিয়ে কাজ করার ছিল।জাতীয় দল হলো সবশেষ পর্যায়, প্রস্তুত হয়ে সেখানে খেলবে ক্রিকেটাররা। এটা হলো ক্যান্সারের ফোর্থ স্টেজের মতো, ওখানে ক্রিকেটারা হয় বাঁচবে, অথবা মরবে। এর আগের স্টেজে কাজ করার সুযোগ আছে অনেক।আপনি তাহলে ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে কাজ করতে চান?
Pin It