“সিটি নির্বাচনে জয় দলের জনপ্রিয়তার প্রমাণ”

1687535647.awami

চার সিটি নির্বাচনে দলের বিজয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের পক্ষে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে দল ও সরকারের জনপ্রিয়তা প্রমাণ হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চারটিতেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনগুলো ছিল আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে সিটিগুলোতে আওয়ামী লীগের বিজয় অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়ে। বিশেষ করে প্রথমেই গাজীপুর সিটি করপোরেশনে দলীয় মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ে এই চ্যালেঞ্জ আরও স্পষ্ট হয়।

গাজীপুরে পরাজয়ের ঘটনা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হতাশ ও চিন্তিত করে তোলে। পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে অনৈক্যকে চিহ্নিত করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যে প্রাধান্য দিয়ে মাঠে নামেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে নামানো হয়।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব থাকলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করায় এবং সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরায় বরিশাল, খুলনা, সিলেট এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সহজ বিজয় হয়েছে বলেই দলটির প্রাথমিক মূল্যায়ন।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয় আওয়ামী লীগের জন্য অনেক বড় ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে। এসব নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের প্রার্থী ছিলেন। আর তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও ওই দলটির কর্মী সমর্থকরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষেই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অবস্থান নেন। বিএনপির কর্মী সমর্থকদের ভোট আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষেই পড়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়েই এই নির্বাচনগুলোতে বিজয়ের ফলে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়েছেন। দেশের সাধারণ মানুষের কাছে দলের জনপ্রিয়তার বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছেছে। তাছাড়া সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের কাছেও অভ্যন্তরীণ ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি বার্তা গিয়েছে। এসব বিষয় জাতীয় নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে আওয়ামী লীগের বিজয়কে তরান্বিত করতে সহায়ক হবে বলেও দলটির নেতারা জানান।

আওয়ামী লীগের ওই নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ গত সাড়ে ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি এলাকায় যে উন্নয়ন করেছে, তা আজ মানুষের সামনে দৃশ্যমান। সব শ্রেণী-পেশার মানুষই সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে কম-বেশি উপকার পেয়েছে এবং সুবিধা ভোগ করছে। এ বিষয়গুলোও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব ফেলেছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের জন্য এই মুহূর্তে দুটি বিষয়কে জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। একটি হলো, সরকারের উন্নয়নকে দেশের মানুষের কাছে ভালোভাবে তুলে ধরা, আরেকটি হলো অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেলা।

নিজেদের মতানৈক্য দূর করে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামাতে পারলে এবং সরকারের উন্নয়ন সফলতাকে জনগণের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরা হলে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসা কঠিন হবে না। আর এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এখন থেকেই আওয়ামী লীগ সামনের দিকে অগ্রসর হবে বলেও জানান দলটির নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বালানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে আমাদের প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে দলের জনপ্রিয়তা প্রমাণ হয়েছে। সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে, মানুষ তো এগুলো মূল্যায়ন করেছে।

তিনি বলেন, গাজীপুরেও আমাদের ভালো প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু কেন পরাজিত হলেন, জানি না। তবে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে আমাদের প্রার্থীরা ভালোভাবেই বিজয়ী হয়েছেন। সেখানে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের পক্ষে এর একটি ছাপ পড়বে বলে আশা করি।

Pin It