সিডনির বর্ষসেরা বাংলাদেশি নারীর নতুন ইতিহাস

Untitled-112-5c7ae06b1eda1-5c7aedb53c812

আসন্ন রাজ্য সরকার নির্বাচনে অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবরিন ফারুকী ঊস্রী। প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে দেশটির রাজ্য সরকার নির্বাচনে উচ্চকক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার লেবার পার্টি থেকে সাবরিনের প্রার্থী হওয়ার খবর জানাজানি হলে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে তাকে শুভেচ্ছা জানান।

আগামী ২৩ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই রাজ্যে মোট ভোটার সংখ্যা ৫২ লাখ। এর আগে সাবরিন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের (এনএসডব্লিউ) বর্ষসেরা নারী পুরস্কার অর্জন করেন। সিডনির ব্যাংকসটাউন সংসদীয় এলাকার উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য বিচারকমণ্ডলী তাকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন। গত বছরের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সিডনির আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাবরিনকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। তার এ অর্জনের জন্য সাধুবাদ জানান নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ব্যাংকসটাউনের সাংসদ তানিয়া মিহাইলুক।

সাবরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গতকাল তিনি বলেন, যোগ্যতা ও দক্ষতার নিরিখেই অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছি। সাড়ে চার বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে সক্রিয় আছি। সাবরিন আরও বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় বড় কথা নয়। বাংলাদেশিদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় নতুন একটি দিগন্তের সূচনা হয়েছে- এটিই মুখ্য বিষয়। অস্ট্রেলিয়ায় সরকার ব্যবস্থায় তিনটি ধাপ রয়েছে- স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ রয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে এর আগে বাংলাদেশি কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে রাজ্য সরকারের উচ্চকক্ষে বাংলাদেশি কারও নির্বাচন করার নজির নেই। সেখানে একজন বাংলাদেশি নারীকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত গর্বের। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার ৪২ সদস্যবিশিষ্ট। বিভিন্ন পার্টি থেকে প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেবেন।

সাবরিনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেছেন। এর পর অস্ট্রেলিয়ায় নিউ ওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। পরে সিডনি ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব এডুকেশন থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘সেরা গবেষণা শিক্ষার্থী’ পুরস্কারও প্রদান করে।

২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পান সাবরিন। বর্তমানে তিনি দেশটির ফেয়ার ওয়ার্ক কমিশনের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত। পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণ সংস্থা ও বাঙালি কমিউনিটি সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি চিত্রকরও। অস্ট্রেলিয়ার পাবলিক সার্ভিসে যোগদানের আগে সাবরিন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক অ্যান্ড ফেয়ার ওয়ার্ক কমিশনে কাজ করেন। সাবরিন সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী এক স্বপ্নবাজ নারী। একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তিনি নারী ক্ষমতায়ন ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কাজ করছেন। পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ তার। সাবরিনের স্বামী খুরশিদ রহমান অস্ট্রেলিয়ায় প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করেন। তাদের ৮ বছর বয়সী এক সন্তান রয়েছে।

Pin It