সি আর দত্তের মরদেহ নিয়ে ফিরবেন চার ছেলেমেয়ে

new-york-dutta-02

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্তের (সি আর দত্ত) মরদেহ দেশে আনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন তার ছেলেমেয়েরা।

তবে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সব প্রস্তুতি সারতে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তার বড় মেয়ে মহুয়া দত্ত।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, তার বাবার মরদেহ আপাতত ফ্লোরিডার বয়েন্টবিচে একটি ফিউনারেল হোমে রাখা হয়েছে।

“বাবার কফিন নিয়ে আমরা চার ভাই-বোনই ঢাকায় যাব। সেজন্যে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক ফরমালিটিজ আছে। তাই সময় নেবে কয়েক দিন।”

বয়েন্টনবিচের বেথেসডা সাউথ হাসপাতালের হসপিস কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল) মারা জান সি আর দত্ত।

তিনি ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বীর উত্তম খেতাবধারী এই মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

সিআর দত্তের বড় মেয়ে মহুয়া দত্ত এবং ছেলে ডা. চিরঞ্জিব দত্ত রাজা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। ছোট মেয়ে কবিতা দাসগুপ্ত হ্যাপি থাকেন ফ্লোরিডায়। আর মেজো মেয়ে চয়নিকা দত্ত কানাডায় থাকেন।

গত কয়েক বছর ধরে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কেই থাকছিলেন সি আর দত্ত। গত বছরের শেষ দিকে তিনি ফ্লোরিডায় ছোট মেয়ে কবিতার বাসায় যান। মার্চে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়লে তিনি আর নিউ ইয়র্কে ফেরেননি।

কবিতার স্বামী প্রদীপ দাসগুপ্ত জানান, গত বৃহস্পতিবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি ভেঙে যায় তার শ্বশুরের। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার পায়ে অস্ত্রোপচারও করা হয়।

“সে সময় উনাকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করতে হয়েছিল। উনি ছিলেন অ্যাজমার পেশেন্ট। সার্জারির পর তার শ্বাসকষ্ট মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়, কিডনিও অচল হয়ে পড়ে।”

কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংজ্ঞা ফেরানো সম্ভব হলেও পরে অবস্থার আরও অবনতি হয়। সোমবার রাতে হাসপাতালেই মারা যান সি আর দত্ত।

বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডায় রওনা হয়েছিলেন মহুয়া ও রাজা। বিমানবন্দর থেকে কবিতার বাসায় যাওয়ার পথেই তারা সি আর দত্তের মৃত্যু সংবাদ পান। পরে ব্যারিস্টার চয়নিকাও কানাডা থেকে ফ্লোরিডায় পৌঁছান।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সি আর দত্তকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য করতে চান তারা। সেজন্য চার ভাইবোনই দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্তবাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের রাজধানী শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন সি আর দত্ত। বাবা উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ছিলেন পুলিশ অফিসার। পরে তারা স্থায়ীভাবে চলে আসেন হবিগঞ্জে।
১৯৫১ সালে তখনকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার চার বছরের মাথায় পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে আসালংয়ে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন সি আর দত্ত।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের চূড়ান্ত মুহূর্ত যখন উপস্থিত, সে সময় ছুটিতে দেশেই ছিলেন সি আর দত্ত। তখন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের মেজর।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে উদ্দীপ্ত সি আর দত্ত মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তাকে দেওয়া হয় ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব।

সিলেট অঞ্চলে ওই সেক্টরে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যার বেশ কয়েকটিতে নিজেই নেতৃত্ব দেন সি আর দত্ত।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্ব ও অবদানের জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম মহা পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন সি আর দত্ত। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

Pin It