‘সীমান্তে মিয়ানমারের সৈন্য সমাবেশ দেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল’

image-350734-1601627174

সীমান্তে মিয়ানমারের সৈন্য সমাবেশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত নিপীড়ন নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার তিন বছর পূর্তির প্রাক্কালে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিক ফল। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।

শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই– বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এ মুহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকার বিষয় হওয়া উচিত ছিল রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান। সরকারের সামগ্রিক কার্যকলাপ বিবেচনায় এ ধরনের অগ্রাধিকার সর্বত্রই অনুপস্থিত। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে– এখন পর্যন্ত এ সমস্যার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি, বিশ্ব সফর করেননি এবং জাতিসংঘে গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেননি। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমরা বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সবস্তরেই ব্যর্থ হচ্ছি।

তিনি বলেন, সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে শুরু থেকে দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে জটিল থেকে জটিল করে তুলেছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে– এ সমস্যাকে দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে অ্যাডহক ভিত্তিতে সমাধানে কার্যত মিয়ানমারের পাতা ফাঁদে পা দেয়া। বর্তমান সরকারের এ দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধসহ কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রস্তাবে আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু চীন ও রাশিয়ার সমর্থন লাভে আমরা ব্যর্থ হই। এমনকি তথাকথিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চিত্রিত করতে যখন বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা নিয়ত ব্যতিব্যস্ত এ রকম সময়েও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের নেয়া নিপীড়নমূলক পদক্ষেপকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ বলে সমর্থন করে ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের সমগ্র জনগণকে গভীরভাবে হতাশ করেছিল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে সবাই অবগত যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গত ১১ সেপ্টেম্বর অন্তত তিনটি পয়েন্টে মিয়ানমার সৈন্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। দুদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের অন্তত তিন পয়েন্টে কা নিউন ছুয়াং, মিন গা লার গি ও গার খু এ ট্রলার থেকে মিয়ানমার সৈন্যদের নামতে দেখা গেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, মিয়ানমার সেনাবাহিনী একদিনেই এক হাজারের বেশি সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এহেন সেনা সমাবেশের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ ধরনের অপতৎপরতা রুখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক আন্তঃআঞ্চলিক কূটনীতিক উদ্যোগ নিতে পদক্ষেপ নিতে বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে গণহত্যা শুরুর সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ঠিক একইভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করেছিল।

সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাই, রোহিঙ্গা সমস্যা দূর করতে হলে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন, গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করুন, বহির্বিশ্বে দেশের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করুন।

Pin It