যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থীদের জন্য ৪৫০ কোটি ডলারের মানবিক ত্রাণ সাহায্য অনুমোদন করেছে।
সীমান্তে শরণার্থীদের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নিষ্ঠুর নীতির পথ রুদ্ধ করার চেষ্টাতেই এ সাহায্য প্যাকেজ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা।
সীমান্তে শিশুদের দুর্দশা, বিশেষ করে সেখানে কয়েকজন শরণার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পর ডেমোক্র্যাটরা এ উদ্যোগ নিল।
প্রেসিডেন্টের নির্মম শরণার্থী নীতিতে বহু পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে, অনেক সম্প্রদায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে। আর এ কারণেই ডেমোক্র্যাটরা তাদের সাহায্য বিলে তহবিল ব্যয়ের বিষয়টি নিয়ে কিছু কড়া নিয়মকানুনের উল্লেখ করেছে।
হাউজ এপ্রোপ্রিয়েশনস কমিটির চেয়ারপার্সন নিতা এম লোয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ তহবিল কেবল মানবিক সাহায্যর জন্যই ব্যয় হতে হবে, শরণার্থীদের উচ্ছেদ করা, ধরপাকড় করা কিংবা সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের জন্যও ব্যয় করা যাবে না।
তবে ডেমোক্র্যাটদের এ ব্যয় বরাদ্দ বিলটি রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেটে কঠিন বিরোধিতার মুখে পড়েছে। রিপাবলিকানরা প্রায় সবাই একযোগে এর বিরোধিতা করে বলেছে, এ বিলে মাত্রাতিরিক্তভাবে অভিবাসন সংস্থাগুলোর ক্ষমতার রাশ টেনে ধরা হয়েছে। আর তহবিলও পর্যাপ্ত নয়।
ডেমোক্র্যাটদের এ বিলের বিপরীতে সিনেট সীমান্ত সংস্থাগুলোর তহবিল ব্যয়ের ওপর কম কড়াকড়ির একটি বিল আনার চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মেক্সিকো সীমান্তে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রয়োগকারী কয়েকটি সংস্থাসহ এ প্রক্রিয়ায় জড়িত অন্যান্য সংস্থাগুলোকে বাড়তি তহবিল দেওয়া নিয়ে কয়েকজন ডেমোক্র্যাট উদ্বেগ প্রকাশ করাতেই বিলে তহবিল ব্যয়ের বিষয়টিতে কড়াকড়ি করা হয়।
প্রতিনিধি পরিষদে ২৩০-১৯৫ ভোটে বিলটি অনুমোদন পেয়েছে। অল্প কয়েকজন ডেমোক্র্যাট এখনো বিলটিতে সমর্থন দিচ্ছে না। অন্যদিকে, মাত্র তিনজন রিপাবলিকান বিলটি সমর্থন করেছে।
বর্তমান অবস্থায় বিলটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টেবিলে গেলে এটি ভেটোর মুখেই পড়বে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, তিনি বিলটিতে মানবিক ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কিছু কড়াকড়ির পদক্ষেপ পছন্দ করেননি। তবে তার অর্থের খুবই প্রয়োজন।
ট্রাম্প প্রশাসন ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে বর্তমান সংকটজনক অবস্থার সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ করেছে।
সীমান্ত নিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট কেন?
২০১৮ সালের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থীদের জন্য ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেন। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা প্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীদের বিচারের পদক্ষেপ নেন তিনি। এতে ছোট ছোট শিশুরা বাবা-মা’র কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
গতবছর এ পরিবার বিচ্ছিন্নতা বন্ধ করতে আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরও অনেককেই সরকারি কেন্দ্রে আটক রাখা হয়। সেখানে সাংবাদিক এবং অধিকার কর্মীদেরও তেমন প্রবেশাধিকার ছিল না।
তবে সম্প্রতি টেক্সাসের একটি কেন্দ্রে আইনজীবীরা এক বিচারকের অধীনে প্রবেশাধিকার পান। এরপর তারাই জানান সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শিশুদেরকে আটকে রাখার কথা।
সীমান্ত সংকট নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন:
*শরণার্থীরা আসছে কোথা থেকে?
মূলত মধ্য আমেরিকার দেশ, বিশেষত গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস এবং এল সালভাদর থেকে পালিয়ে এসে মানুষ পরিবারশুদ্ধ মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার চেষ্টা করছে।
*তারা কেন পালিয়ে আসছে?
অতি দারিদ্র এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ কর্মকাণ্ড ও সহিংসতার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে মানুষ দলে দলে দেশান্তরী হচ্ছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ওই তিনটি দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ বলে অভিহিত করেছে।
*শিশুরা এখনো পরিবারবিচ্ছিন্ন কেন?
শরণার্থী পরিবারগুলো থেকে শিশুদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার পদক্ষেপটি ২০১৮ সালে সরকারিভাবে বন্ধ হলেও আইনের ফাঁক গলে ৭শ’ পরিবারকে তখন থেকেই বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা।
*কত মানুষ সীমান্ত পেরোয়?
যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত প্রহরা সংস্থার তথ্যমতে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে ৫৯৩,৫০৭ জন পাকড়াও হয়েছে। গত মাসে ১৩২,৮৮৭ জনকে সীমান্ত পেরোতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১১,৫০৭ জন ছিল পরিবারহারা শিশু এবং পরিবারের সঙ্গে ছিল ৮৪,৫৪২ জন শিশু।
*কত মানুষ মারা গেছে?
সীমান্ত প্রহরা সংস্থার রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অর্থবছরে মারা গেছে ২৮৩ জন। অন্যদিকে জাতিসংঘের মিসিং মাইগ্র্যান্ট প্রজেক্টের প্রতিবেদন বলছে, এ বছর যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে এ পর্যন্ত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে অথবা তারা নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জন শিশু।
এতে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে?
শিশুদের যে দুর্দশা তাকে শিশু নিপীড়নই আখ্যা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। বলেছেন, “এ এমন এক নিষ্ঠুরতা যে তা কেবল একজন আমেরিকান হিসাবে নয় বরং নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসাবে আমাদের প্রতিটি মূল্যবোধেরই পরিপন্থি।”
তবে রিপাবলিকানদের বক্তব্য হল, শরণার্থী সংকট সামাল দিতে দিনের পর দিন কোনো কিছু না করে, এমনকী একটা সংকট যে আছে তাও স্বীকার না করে ডেমোক্র্যাটরা ত্রটিপূর্ণ আইনের প্রস্তাব করছে এবং তাদের পদক্ষেপগুলো পুরোপুরি রাজনৈতিক।