বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সীমিত সম্পদ দিয়েই বাংলাদেশ সঠিকভাবে করোনা (কোভিড-১৯) মোকাবেলা করছে।
‘করোনা সংক্রমণ রোধে এখন প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা’-এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। শুরু থেকেই দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে আসছে।
টিপু মুনশি প্রচার মাধ্যমের এ সহযোগিতা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত রাখার জন্য কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান।
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওয়ালটনের সহযোগিতায় কোভিড-১৯ মোকাবেলায় তাইওয়ান এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পক্ষ থেকে প্রদত্ব মেডিকেল সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বক্তব্য রাখেন।
টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় আমরা সফলভাবে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে যাচ্ছি। ওয়ালটন স্বাস্থ্য সেবায় সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তাইওয়ানের এ সহযোগিতা আমাদের কাজে লাগবে। পৃথিবীর অনেক দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত আরও উন্নত হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকলকে চলতে হবে, এতে আমরা সকলেই নিরাপদ থাকবো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সফল ভাবেই কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হবার সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের বিমান, নৌ এবং স্থল বন্দরগুলোতে সময়মত স্কেনিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই সময় আমাদের পর্যাপ্ত মেডিকেল সামগ্রী ছিল না, যা ছিল তাই দিয়ে আমরা পরিকল্পিতভাবে এ মহামারি মোকাবেলা শুরু করি। স্পেশালাইজড হাসপাতাল ঘোষণা করে সুচিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে। এখন হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা অনেক কম। এ সকল হাসপাতালে ৬০-৭০ ভাগ সিট খালি থাকছে। এখন স্পেশালাইজড হাসপাতালের সংখ্যা কমিয়ে সাধারণ চিকিৎসার জন্য খুলে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, কোভিড-১৯ সারা দুনিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাক্তার নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ এবং সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সাধ্যের সবটুকু দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেশের ৬৪টি জেলায় বিনা মাশুলে স্বাস্থ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। কলসেন্টার ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট অব্যাহত রাখার মাধ্যমে জীবনযাত্রা গতিশীল করার চেষ্টা করছি।
মন্ত্রী বলেন, করোনাকালেও গ্রামের মানুষ পর্যন্ত উপলব্ধি করছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ না থাকলে বৈশ্বিক মহামারির এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হতো।
আজকের বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষার্থীও ইন্টারনেট সুবিধা দাবি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালেও দেশে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র আট লাখ। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদের দিকনির্দেশনায় ডিজিটালাইজেশনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। দেশে আজ ২১শত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ১০ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোস্তাফা জব্বার দৃঢ় আশাবাদ প্রকাশ করেন, বাঙালি বীরের জাতি। করোনা থেকেও এ জাতি জয়ী হবে।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ১ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক, ১৬০০ এন-৯৫ মাস্ক, ২০ হাজার কাপড়ের মাস্ক, ১০ হাজার ফেস ফিল্ড, ৫০০ পিপিই, ২০০ গগলস এবং ২ সেট ভেন্টিলেটর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে।
বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. নূর-উর-রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অন্যান্যের মধ্যে ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ও কম্পিউটার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, ঢাকাস্থ তাইওয়ান এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক তিথমি ডব্লিউ ডিসো এবং ম্যানেজর রঞ্জন চক্রবর্তী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।