সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে জরিপ চালিয়ে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার পেয়েছে বন বিভাগ, এই সংখ্যা চার বছর আগের চেয়ে আটটি বেশি।
ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনার এই জরিপ চালানো হয়। এবারের জরিপের পুরুষ বাঘের চেয়ে স্ত্রী বাঘের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে। একে উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার ‘সুন্দরবনের বাঘ জরিপের ফলাফল ঘোষণা ও সেকেন্ড ফেইজ : স্ট্যাটাস অব টাইগারস ইন বাংলাদেশ সুন্দরবন-২০১৮’ এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাঘ বিষয়ক বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু করে বন বিভাগ। তখনকার হিসাবে বাঘের ঘনত্ব ছিল প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ২ দশমিক ১৭টি। মোট বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি।
সুন্দরবনের খুলনা, সাতক্ষীরা ও শরণখোলা রেঞ্জে এবারের জরিপটি শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর, যা ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২৪৯ দিন চলে।
তিনটি রেঞ্জের তিনটি ব্লকের ১৬৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিশেষ ধরনের ক্যামেরা দিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপে বন বিভাগ এবার ৬৩টি পূর্ণবয়স্ক, চারটি তরুণ, পাঁচটি অপ্রাপ্তবয়স্ক বাঘের ২৪৬৬টি ছবি পেয়েছে। এ ছবিগুলো যাচাই করেই বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইউএসএআইডির অর্থায়নে বেঙ্গল টাইগার কনজারভেশন অ্যাক্টিভিটি (বাঘ) প্রকল্পের আওতায় এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
এসইসিআর মডেলে তথ্য বিশ্লেষণ করে সুন্দরবনের প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাঘের আপেক্ষিক ঘনত্ব পাওয়া গেছে ২.৫৫ + ০.৩২।
সুন্দরবনের বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র চার হাজার ৪৬৪ কিলোমিটার এলাকাকে আপেক্ষিক ঘনত্ব দিয়ে গুণ করে বাঘের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে ১১৪টি।
এবার জরিপে দেখা গেছে, বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩ দশমিক ৩৩টি। খুলনা রেঞ্জে সবচেয়ে কম প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ দশমিক ২১টি বাঘ রয়েছে।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির বলেন, বাঘের সংখ্যা বাড়লেও আশঙ্কাজনকভাবে সুন্দরবনের তিনটি রেঞ্জেই পুরুষ বাঘের সংখ্যা কমেছে। ৪৪টি বাঘিনীর বিপরীতে পুরুষ বাঘের সংখ্যা মাত্র ৯টি।
এবার জরিপে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ৬টি বাঘ, খুলনা রেঞ্জে ১টি, শরণখোলা রেঞ্জে ২টি পুরুষ বাঘ পেয়েছে বন বিভাগ। সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২২টি, খুলনা রেঞ্জে ৩টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৯টি বাঘিনী রয়েছে।
পুরুষ ও নারী বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে জাহিদুল কবির বলেন, “বিভিন্ন রেঞ্জে পুরুষ বাঘের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়ার মানে হয়, তা বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বড় হুমকি। বাঘের বংশবৃদ্ধিতে বড় প্রভাব রাখতে পারে এটা। আমাদের দ্রুত এটা নিয়ে কাজ করতে হবে।”
সাতক্ষীরায় ৮টি ও শরণখোলায় ২টি বাঘের লিঙ্গ পরিচয় জানতে পারেনি বন বিভাগ।
সাতক্ষীরা রেঞ্জে ১২০৮ বর্গ কিলোমিটারে ৩৬টি বাঘ, খুলনা রেঞ্জে ১৬৫ বর্গ কিলোমিটারে ৪টি বাঘ, শরণখোলায় ২৮৩ বর্গ কিলোমিটারে ২৩টি বাঘের বিচরণ দেখতে পেয়েছে বন বিভাগ।
২০১৫ সালের জরিপে সাতক্ষীরায় ১৩টি, খুলনায় ৭টি, শরণখোলায় ১৮টি বাঘের দেখা পেয়েছিল বন বিভাগ।
খুলনা অঞ্চলে বাঘ কমে যাওয়া কারণ হিসেবে ওই অঞ্চলে বাঘ শিকার বা আবাসভূমি উজার হওয়ার কথা উঠে এলে তা স্বীকার করে নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, যিনি সুন্দরবনের সংলগ্ন বাগেরহাট জেলার সংসদ সদস্য।
সুন্দরবনে বাঘের খাবার চিত্রা হরিণ ও বুনো শুয়োরের সংখ্যা হ্রাসের দিকটি সামনে এনে জাহিদুল কবির বলেন, “আমাদের এখন ভাবতে হবে, সুন্দরবনের কোন অঞ্চলে ঠিক কতটি বাঘ থাকা উচিৎ।”
এবারের জরিপে বন বিভাগকে সহযোগিতা করেছে ওয়াইল্ড টিম, যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ সোনিয়ান কনজারভেশন বায়োলজি ইনস্টিটিউট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।