জেসন হোল্ডারের করা সুপার ওভারে ৩টি করে ছক্কা ও চারে ফন বিক তোলেন ৩০ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুপার ওভারে সর্বোচ্চ রান এটি।
পরে ফন বিকের প্রথম বলে জনসন চার্লস ছক্কা হাঁকিয়ে নাটকীয় কিছুর আভাস দেন। তবে পরের দুই বলে আসে স্রেফ দুটি সিঙ্গেল। এরপর টানা দুই বলে চার্লস ও রোমারিও শেফার্ডকে ফিরিয়ে দলকে স্মরণীয় জয়ের উচ্ছ্বাসে ৩২ বছর বয়সী পেসার।
মূল ম্যাচে জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে নেদারল্যান্ডসের দরকার ছিল ৩০ রান, হাতে ৩ উইকেট। ক্রিজে তখন খানিক আগে নামা দুই ব্যাটসম্যান।
শেষের আগের ওভারে শুরুতে ওয়াইড দেন রোস্টন চেইস। এই অফ স্পিনারের বৈধ প্রথম তিন বলে চার, ছক্কা এবং আবার চার মেরে ব্যবধান কমান আটে নামা ফন বিক।
পরের দুই বলে আসে ১ রান। এরপর আবার একটি ওয়াইড এবং শেষ বলে চার মেরে দেন আরিয়ান দত্ত। ফলে শেষ ওভারে দরকার পড়ে ৯ রান।
এবার আলজারি জোসেফের প্রথম বলে চার মেরে সমীকরণ ৫ বলে ৫ রানে নামিয়ে আনেন ফন বিক। দ্বিতীয় বলে তিনি নেন সিঙ্গেল। পরের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান আরিয়ান।
চতুর্থ বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি ক্লেটন ফ্লোয়েড, তবে ‘বাই’ থেকে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইকে যান ফন বিক। পঞ্চম বল মিড অনের ওপর দিয়ে খেলে ডাবল নিয়ে স্কোর লেভেল করেন তিনি।
শেষ বলে চাই ১। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের হাতছানি ডাচদের সামনে। তবে জোসেফের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে মিড অনে জেসন হোল্ডারের হাতে ধরা পড়েন ফন বিক।
এরপর সুপার ওভারে তার ওই অসাধারণ ব্যাটিং ও বোলিংয়ে নেদারল্যান্ডসের স্মরণীয় জয়। মূল ম্যাচে বল হাতে ৭৭ রানে একটি উইকেট এবং ব্যাটিংয়ে ১৪ বলে ২৮ রানের পর সুপার ওভারের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচের সেরা তিনিই।
এই সংস্করণে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে আগের পাঁচ ম্যাচের সবগুলি হেরেছিল ডাচরা। এবার এই জয়।
হারারেতে বিশাল রান তাড়ায় নেদারল্যান্ডসের আশা জাগিয়ে তোলেন মূলত তেজা নিদামানুরু। ৩০তম ওভারে ১৭০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের সঙ্গে ৯০ বলে ১৪৩ রানের অসাধারণ জুটিতে দলকে টানেন তিনি। সঙ্গে ৬৮ বলে তুলে নেন দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
শেষ ৩৬ বলে ৬ উইকেট হাতে রেখে ডাচদের দরকার ছিল ৬২ রান। কিন্তু দুই ওভারের মধ্যে দুই থিতু ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি সাদিক জুলফিকারকেও হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে বসেছিল ডাচরা। এরপর ফন বিকের বীরোচিত ব্যাটিং, শেষের নাটক এবং ডাচদের জয়ের হাসি।
৭৬ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১১১ রান করেন নিদামানুরু। এডওয়ার্ডস ৪৭ বলে করেন ৬৭ রান।
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় পুঁজি এনে দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন নিকোলাস পুরান। ৬৫ বলে ৯ চার ও ৬ ছক্কায় ১০৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি। দুই ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ৭৬ ও চার্লস করেন ৫৪ রান। শেষ দিকে ২৫ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন কিমো পল। শেষ পর্যন্ত এসবের কিছুই কাজে এলো না।
বাছাইয়ে প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের পর টানা দুটি হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের ম্যাচে তাদের হারিয়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। বাছাই পেরিয়ে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে খেলার আশায়ও বড় চোট লাগল দুবারের চ্যাম্পিয়নদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩৭৪/৬ (কিং ৭৬, চার্লস ৫৪, ব্রুকস ২৫, হোপ ৪৭, পুরান ১০৪*, শেফার্ড ০, হোল্ডার ৮, পল ৪৬*; ফন বিক ১০-০-৭৭-১, কিংমা ১০-০-৬৬-১, আরিয়ান ১০-১-৭১-০, ডে লেডে ৬-০-৭২-২, ফ্লোয়েড ৬-০-২৬-০, বিক্রমজিত ১-০-১১-০, জুলফিকার ৭-০-৪৩-২)
নেদারল্যান্ডস: ৫০ ওভারে ৩৭৪/৯ (বিক্রমজিত ৩৭, ও’ডাওড ৩৬, বারেসি ২৭, ডে লেডে ৩৩, নিদামানুরু ১১১, এডওয়ার্ডস ৬৭, জুলফিকার ৩, ফন বিক ২৮, আরিয়ান ১৬, ফ্লোয়েড ০*)
ফল: ম্যাচ টাই এবং সুপার ওভারে জয়ী নেদারল্যান্ডস
ম্যান অব দা ম্যাচ: লোগান ফন বিক