পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’ পাঁচ বছরের এই প্রকল্পের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রকল্প এলাকা চিহ্নিত হয়নি। তবে গাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণ ও পরামর্শক নিয়োগ হয়েছে। প্রকল্পের প্রশিক্ষণ ব্যয় ১১০ কোটি টাকা হলেও এই সময়ে চূড়ান্ত হয়নি কিসের ওপর ও কাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রথম বছরে ৬৫ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা। ৬০০ গ্রামের ৪০ হাজার বননির্ভর পরিবারকে নিয়ে এই প্রকল্পের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রামগুলো চিহ্নিত করা হয়নি। এক হাজার ৫০২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের এক হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া।
শনিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে কমিটি অসন্তোষ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। কিন্তু তাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। মৌলিক কাজগুলোই করা হয়নি। এক বছর পরও তাদের পরিকল্পনা গোছানো নয়। পরিকল্পনার দিক থেকে কোনো ধরনের স্বস্তি খুঁজে পাননি এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাস্তবায়ন তো অনেক পরের কথা।
সাবের চৌধুরী বলেন, এত বড় প্রকল্পের পরিচালককে আরও কয়েকটি প্রকল্পের দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। কমিটি বলেছে, এত বড় প্রকল্পের জন্য একজন সার্বক্ষণিক পরিচালক নিয়োগ করতে হবে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) গঠন করা হলেও তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও কমিটি প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের নামটা যত ভালো, কাজ ততটা ভালোভাবে শুরু হয়নি।
কমিটির কার্যপত্র পর্যালোচনা ও সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং বনজ সম্পদ উজাড় রোধ ও বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকা সুবিধা প্রদানসহ বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প নেওয়া হয়। মেয়াদ শুরুর ছয় মাসের মাথায় গত বছর ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
সংশ্নিষ্টরা জানান, দেশের আটটি বিভাগের ২৮টি জেলায় পাঁচটি বনাঞ্চলে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও প্রকল্প এলাকায় বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়বর্ধক কাজের সুযোগ সৃষ্টি। এর মাধ্যমে বন ও রক্ষিত এলাকা সংলগ্ন ৬০০টি গ্রামের ৪০ হাজার বননির্ভর পরিবারের উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া ৫২ হাজার ৭২০ হেক্টর বৃক্ষশূন্য পাহাড়ি ও সমতল বনভূমিতে বনাচ্ছাদন, নতুন জেগে ওঠা চরে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন, ২০টি রক্ষিত এলাকায় দুই হাজার ৫০০ হেক্টর বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং এক হাজার ৩৩০ হেক্টর এলাকায় বন্যপ্রাণীর চলাচল পথের উন্নয়ন, ছয়টি বনে রক্ষিত বনব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন, পাখি শুমারি ও রিং পরানো ও শিকারি পাখি সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জাতীয় বনাঞ্চল এক দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিএনসিসিকে সর্বোচ্চ জরিমানার সুপারিশ : আমিনবাজার বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের দায়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) সর্বোচ্চ জরিমানা করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। আমিনবাজারে ডিএনসিসির ওই বর্জ্য ডাম্পিংয়ের ল্যান্ডফিলটি কোনো রকমের পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, আমিনবাজারের বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন নিয়ে আলোচনার পর পরিবেশ অধিদপ্তর ডিএনসিসিকে তিনটি নোটিশ দেয়। ডাম্পিং স্টেশনটি বন্ধ করার জন্য বলা হলেও তাতে রাজি হয়নি ডিএনসিসি। তারা আরও এক থেকে দেড় বছর সময় চেয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি সাবের চৌধুরী বলেন, পরিবেশ দূষণের জন্য জরিমানার বিধান আছে। আইন সবার জন্য সমান। সিটি করপোরেশন এখানে কোনো বিশেষ সুবিধা পেতে পারে না। তাদের ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তর আগেও এ ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছে। তারা কোনো সাড়া দেয়নি। ওই বর্জ্য স্টেশন বন্ধ করার জন্যও তাদের চিঠি দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাদের জরিমানা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মোজাম্মেল হোসেন, দীপংকর তালুকদার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম, রেজাউল করিম বাবলু এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার অংশ নেন।