নেতাদের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের এক সপ্তাহের মাথায় গণফোরামের ৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন কামাল হোসেন, যেখানে ঠাঁই হয়নি দলটির দুই পরিচিত মুখ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মহসিন মন্টুর।
নতুন কমিটিতে সভাপতির পদে আছেন কামাল হোসেনই, আর রেজা কিবরিয়াকে করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক।
কমিটি থেকে বাদ পড়া সুব্রত চৌধুরী বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি ছিলেন, তার সঙ্গে আরেক কার্যনির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদও নেই নতুন কমিটিতে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া। ওই সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোস্তফা মহসিন মন্টু।
আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে ১৯৯৩ সালে কামাল হোসেন যখন গণফোরাম গড়ে তোলেন তখন তার সঙ্গেই ছিলেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসিন মন্টু। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তার আগের বছরই মন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওই সময় কামাল হোসেনও আওয়ামী লীগ নেতাদের খুব একটা আস্থায় ছিলেন না। ২০০৯ সালে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হন মোস্তফা মহসিন মন্টু।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গত বছর এপ্রিলে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে মোস্তফা মহসিন মন্টুর জায়গায় সাধারণ সম্পাদক করা হয় রেজা কিবরিয়াকে। ওই কমিটিতে নির্বাহী সদস্যের পদ পাওয়া মন্টুকে এবার কমিটিতেই রাখা হয়নি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ। এরপর গত বছর গণফোরামের ওই বিশেষ কাউন্সিলের দলের ১ নম্বর কার্যনির্বাহী সভাপতির পদ পান তিনি। তাকেও আর নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই দেননি কামাল হোসেন।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার স্বাক্ষরে কমিটির যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেখানে আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের নাম।
এর বাইরে আ ও ম শফিকউল্লাহ, অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান, অ্যাডভোকেট শান্তিপদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট জানে আলম, মেজবাহউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট সগির আনোয়ার, অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম, অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর ও মোশতাক আহমেদসহ অন্যদের নাম রয়েছে।
এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গণফোরামের সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, “কমিটির তালিকা দেখলে বোঝা যাবে যারা গণফোরামের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চা করে আসছিলেন এবং সংগঠনের ভালোর জন্য উচিত কথা বলতেন তাদের এই কমিটিতে রাখা হয়নি। এটা এক ব্যক্তির মনোচিন্তার একটি কমিটি বলে আমি মনে করি।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কমিটিতে এমন অনেককে আনা হয়েছে যারা দীর্ঘ সময় ধরে এই দলে সক্রিয় ছিলেন না।
“আর সক্রিয় নেতাদের অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে।”
সম্প্রতি গণফোরামে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের খবর সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের পাল্টা-পাল্টি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে এই মাসের প্রথম সপ্তাহেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেন কামাল হোসেন।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, “সংগঠনের স্থবিরতা দূর করতে ২৬ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই বিশেষ কাউন্সিল ২০১৯ কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গণফোরামের সভাপতি হিসেবে আমি ৫ মে ২০১৯ তারিখে ঘোষিত গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করছি।
“পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দলের যাবতীয় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দায়-দায়িত্ব পালন করার জন্য ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গণফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করছি। এই কমিটি গণফোরামের গঠনতান্ত্রিক সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।”