প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি চক্রের ২২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দামি আসবাব দিয়ে সুসজ্জিত অফিস চালু করতেন। এরপর সেখানে বিনিয়োগ, ব্যবসায়ীদের মালামাল সরবরাহসহ নানা প্রক্রিয়ায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে পরদিনই অফিস বন্ধ করে পিঠটান দিতেন।
গত ১৫ বছর ধরে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তারা ‘একশ কোটি’ টাকার মতো আত্মসাৎ করেছে বলে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন।
শনিবার কারওয়ানবাজারে র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এভাবে প্রতারিত হওয়া কয়েকজন ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে অসুন্ধানের পর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেন র্যাব-৪ এর সদস্যরা। শুক্র ও শনিবার মিরপুর, উত্তরা ও রামপুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ইমরান হাসান (২৭), এম আজাদ (৫০), মো. হুমায়ুন কবির ওরফে হালিম (৫৭), আ ন ম রফিকুল ইসলাম (৪৯), আল আমিন সরকার রাজ (২২), আ. বারেক ওরফে এবি বারী (৬১), আব্দুল আউয়াল (৪৬), মো. শাহাদাৎ হোসেন (৩০), মো. মিনহাজ মিঝি (৫৬), মো. কামরুজ্জামান (৪৫), মো. হাবিবুর রহমান (৩৫), মো. আয়নাল হক (৩৮), সঞ্জিত চন্দ্র সাহা (৩৪), মো. সামসুল আলম মজুমদার (৪৮), মেহেদী হাসান হাবিব (৩১), মো. ইউসুফ (৫৩), মো. হিরণ (১৯), মো. মামুনুর রশিদ (৩৪), মো. মাসুদুর রহমান জলিল ওরফে আ. জলিল (৫০), মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে দিপু (৩৫), মো. রফিকুল ইসলাম (৬৪) ও মো. মিজান (৩৫) ।
এরা মানুষ ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে ভিন্ন কৌশল নিয়েছিলেন জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ বলেন, তারা ‘রয়েল চিটার ডেভেলপমেন্ট’ (আরসিডি) নামে নিজেদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সেখানে মাঠ পর্যায়ের কর্মীও নিয়োগ করা হয়ে থাকে। এসব কর্মীদের মধ্যে সাব ব্রোকার, ব্রোকার, ম্যানেজার, চেয়ারম্যান ও ‘বস’ পদবীও রয়েছে।
এরা মূলত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করতেন বলে জানান মুফতি মাহমুদ।
“তাছাড়া বেসরকারি বড় প্রতিষ্ঠানে ছিলেন এখন অবসরে আছেন এমন ব্যক্তিরাও তাদের টার্গেটের মধ্যে রয়েছে, আছে ব্যবসায়ীও।”
তাদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই চক্রটি কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাকে সাজানো অফিসে নিয়ে আসে এবং অফিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে দেয়। এরপর প্রতারণার অংশ হিসাবে কয়েকদিন পর তাকে প্রতিষ্ঠানের লাভ হচ্ছে দেখিয়ে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেয়। ওই ব্যক্তি তার অবসরকালীন সমুদয় টাকা কথিত এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। চক্রটি টাকা গ্রহণ করার পরদিনই অফিস গুটিয়ে পালিয়ে যায়।”
ব্যবসায়ীদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা তার কাছে মালামাল সরবরাহের জন্য অগ্রিম টাকা নিয়ে লাপাত্তা হতে বলে জানান র্যাব মুখপাত্র।
“মালামাল কিনবে বলে টার্গেট ব্যবসায়ীকে তাদের অফিসে নিয়ে আসে এবং আলাপ আলোচনা করে ব্যবসায়ীর বিশ্বাস স্থাপন করতে চুক্তিও করে। এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের একজন ব্যবসায়ীকে বলেন, তিনি যে মালামাল সরবরাহ করবেন তার কাঁচামাল তার পরিচিত একজনের কাছে আছে। খুব কম দামে পাওয়া যাবে। তাতে তারও লাভ হবে।
“এই লোভে পড়ে ব্যবসায়ী ওই প্রতারকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় এবং প্রতারকের দাবি অনুযায়ী মোটা অংকের অগ্রিম দেয়। অগ্রিম নেওয়ার পরপরই প্রতারক চক্রটি অফিস ফেলে গা ঢাকা দেয়। পরের দিন ব্যবসায়ী এসে দেখেন তালা মারা।”
এছাড়া তাস খেলার আড্ডা বসিয়ে সেখানে কায়দায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রলুব্ধ করে তাদের সব টাকা এরা হাতিয়ে নেন বলে জানান তিনি।