মিয়ানমারে অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধান সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করে পার্লামেন্টে সেনা আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে।
যদিও সংবিধানে কি ধরনের সংশোধন করা হতে পারে সে বিষয়ে এনএলডি কিছু জানায়নি।
অর্ধ শতকের সেনাশাসনের অবসান ঘটিয়ে তিন বছর আগে নির্বাচনের মাধ্যমে অং সান সু চির দল মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে।
এনএলডি সরকার এতদিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা করে দেশ পরিচালনা করে আসছিল।
মঙ্গলবার মিয়ানমারের পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব রাখে এনএলডি। ওই প্রস্তাব নিয়ে ভোটের সময় সেনাবাহিনীর পোশাক পরা এমপি’রা ভোট না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন।
২০১৫ সালের নির্বাচনে পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে সু চির দল এনএলডি।
পশ্চিমের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ২০১৭ সালে সেনা অভিযানের সময় দমন-পীড়ন ও নির্যাতন নিয়ে মিয়ানমার সরকারের বেসামরিক এবং সামরিক উভয় অংশই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দারুণ সমালোচিত।
সেনা অভিযানের সময় প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
২০১৫ সালের নির্বাচনের আগে জান্তা শাসনামলে তৈরি মিয়ানমারের সংবিধান সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এনএলডি। নির্বাচনে দলটির বড় জয়ের পেছনে ওই প্রতিশ্রুতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে মত অনেকের।
কিন্ত ক্ষমতা গ্রহণের পর এনএলডিকে বরং সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে না জড়িয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই দেখা গেছে। সংবিধান জটিলতায় সু চি দলীয় প্রধান হয়েও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। তারপরও এনএলডি এতদিন সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়নি।
তিন বছর এভাবেই পার হয়ে গেলেও ২০২০ সালের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে সু চির দলকে এখন পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে। এ কারণে এনএলডি তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে মঙ্গলবারের ওই প্রস্তাব রাখে বলে ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষকদের।
এনএলডির এমপি ইয়ে হতুতও একই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “এটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।”
গত কয়েক সপ্তাহে সু চি দেশটির সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় সফর করছেন। মিয়ানমারে সংখ্যালঘুদের মধ্যে সু চির জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
ইয়াংগন ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হরসেই বলেন, “আগামী ২০২০ সালের নির্বাচনকে ঘিরে মিয়ানমারের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। তাই এনএলডি এ সময়ে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে উদ্যোগ নেবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
“একই সঙ্গে এটা যে সেনাবাহিনীর জন্য খুবই সংবেশনশীল বিষয় সেটাও মনে রাখতে হবে। যদিও কমিটি গঠন করার প্রস্তাব থেকে এখনই এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।”
মিয়ানমারের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই সু চির এনএলডি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।
কিন্তু ২০০৮ সালে জান্তা সরকারের তৈরি করা মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর জন্য পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষিত আছে। সংবিধান সংশোধন করে এই কোটা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে ৭৫ শতাংশের বেশি ভোটের প্রয়োজন। যে কারণে সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবে পার্লামেন্টে সেনা প্রতিনিধিদের আপত্তি সব সময়ই কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কোটার কারণেই নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।