জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনাসহ গুচ্ছ প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। ওই প্রস্তাবে সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, নির্বাচন কমিশন কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার বিভিন্ন ধারা-উপধারায় সংশোধনীর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে নির্বাচন ক্যাডার গঠন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) পদমর্যাদা বাড়ানো, ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। সোমবার নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে এসব প্রস্তাব জমা দেয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদল।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আতিয়ার রহমান, নির্বাহী সদস্য মো. রশিদ মিয়া প্রমুখ।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা মূলত নির্বাচন পরিচালনায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতামত নিয়ে আমরা একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। ওই প্রস্তাবনা নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে জমা দিয়েছি। তিনি বলেন, তাতে প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবনায় সংবিধানে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভোটার তালিকার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম আইনি রূপ দিতে সংবিধানের ১১৯(১) ধারায় সংশোধন চাওয়া হয়েছে।
আরপিওতে সংশোধনীর মধ্যে ব্যালটে নিরাপত্তাব্যবস্থা বা জলছাপ রাখা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ইসি থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব স্পষ্ট করা, তফশিল ঘোষণার পর স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত করা, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা ইসির হাতে ফিরিয়ে আনাসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা তাদের প্রস্তাবে সিইসির পদমর্যাদা বাড়িয়ে মন্ত্রীর ওপরে এবং নির্বাচন কমিশনারদের মর্যাদা আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান করা, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের পদ তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় গ্রেডে উন্নীত করাসহ মাঠ পর্যায়ের অন্য পদগুলোর মর্যাদা সরকারের অন্য দপ্তরের সমান করার সুপারিশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য পৃথক ক্যাডার বা সার্ভিস গঠনের প্রস্তাব করেছেন।
এছাড়া নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োগ, প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরায় সব নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, দলের নিবন্ধন স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও দলের কার্যক্রম তদারকি, রিটার্নিং অফিসারদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন, অভিযোগ নিষ্পত্তি কেন্দ্র খোলারও প্রস্তাব করেছেন ইসি কর্মকর্তারা।