পারলোনা ব্রাজিল। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় ক্রোয়েশিয়া।
কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোলশূ্ন্য ড্র করে ব্রাজিল।
খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে নেইমারের গোলে এগিয়ে যাওয়ার ঠিক দশ মিনিট ব্যবধানে পেটকোভিচের গোলে (১-১) সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া।
অতিরিক্ত সময়ে খেলা (১-১) ড্র হওয়ায় টাইব্রেকার হয়। পেনাল্টিশুটাউটে ব্রাজিলকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় গত আসরের রানার্সআপ দল ক্রোয়েশিয়া।
পেনাল্টিশুটাউটে ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে প্রথমে শট করতে আসেন নিকোলা ভ্লাসিক। তার শট ঠেকাতে পারেননি ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন। কিন্তু ব্রাজিলের প্রথম শটটি নিতে এসে ব্যর্থ হলেন রদ্রিগো। গোলরক্ষক লিভাকোভিচ ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন।
এরপর লোভরো মাজের, ক্যাসেমিরো, লুকা মদ্রিচ, পেদ্রো, মিসলাভ ওরসিক গোল করেন দু’দলের হয়ে। ব্রাজিলের হয়ে চতুর্থ শটটি নিতে এসে মার্কুইনহোস বাম পাশের বারে লাগিয়ে গোল বঞ্চিত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ের আনন্দে, উল্লাসে মেতে ওঠেন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলাররা।
এ নিয়ে দুই বিশ্বকাপের নকআউটে টানা ৬ ম্যাচের মধ্যে ৫টিতে টাইব্রেকারে জিতলো ক্রোয়েশিয়া। এখনও পর্যন্ত ক্রোয়াটরা নকআউটে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ নিয়ে যাওয়া এবং টাইব্রেকারে যাওয়া পর তাদের সাফল্য প্রায় শতভাগ। তাদেরকে কেউই হারাতে পারেনি। এবারও দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপানকে পুরো ১২০ মিনিট ঠেকিয়ে রাখার পর টাইব্রেকারে গিয়ে জিতলো ক্রোয়েশিয়া
জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত। হারলে বিদায়। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে শুক্রবার কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া।
দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে ব্রাজিল শেষ আটে উঠেছে। রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে এই ক্রোয়েশিয়ার অনেক পার্থক্য থাকলেও লুকা মদ্রিচের নেতৃত্বে দলটি এখনও প্রতিরোধে সক্ষম সেটিই প্রথম ৪৫ মিনিটে প্রমাণ হয়েছে।
ব্রাজিল প্রথমার্ধে খুব একটা ছন্দময় ফুটবল খেলতে পারেনি। বাম প্রান্ত দিয়ে খানিকটা আক্রমণের চেষ্টা ছিল। ভিনিসিয়াস ও নেইমারের বোঝাপড়ায় ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ দুই একবার ভেদ করলেও চূড়ান্ত সফলতা আসেনি।
প্রথমোর্ধে দুই দলই খেলেছে সমান সমান। বল দখলের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া কোনো অংশেই কম ছিল না ব্রাজিলের চেয়ে। ব্রাজিল পাস দিয়েছে ২৭৯টি। ক্রোয়েশিয়া দিয়েছে ২৬৭টি। গোলমুখে ব্রাজিল শট নিয়েছে ৫টি। ক্রোয়েশিয়া নিয়েছে ৩টি।
১৩তম মিনিটেই গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ডান পাশ থেকে জুরানোভিচ বল এগিয়ে দিলে ছোট বক্সের ভেতর দিয়ে বল যাওয়ার সময় তাতে পা লাগানোর চেষ্টা করেন প্যালাসিচ এবং পেরিসিচ। কিন্তু কেউ বলে পা লাগাতে পারেননি। গোলও হয়নি। বেঁচে যায় ব্রাজিল।
২০ মিনিটে বল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন ভিনিসিয়ুস। নেইমারের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান করে বল নিয়ে শট করেন ক্রোয়েশিয়ার জালে। কিন্তু ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে যায়। ফিরতি বলে আবারও নেইমার তিন-চারজনকে কাটিয়ে শট নেন। যদিও ছিল দুর্বল শট। গোলরক্ষকের কাছে বল।
২২ মিনিটে ক্যাসেমিরোর দুর্দান্ত শট, কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা। ৩০ মিনিটে ব্রাজিলের বক্সের সামনে থেকে দুর পাল্লার শট নেন জুরানোভিচ। কিন্তু বলটি চলে যায় ব্রাজিলের পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে।
৪০ মিনিটে বক্সের বাম পাশে রিচার্লিসনকে ফাউল করা হলে ফ্রি-কিক দেয়া হয়। কিক নেন নেইমার। অসাধারণ এক কিক নেন নেইমার। কিন্তু বল ধরে ফেলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক।
৪৭তম মিনিটে ডান পাশ থেকে রাফিনহা ক্রস করেছিলেন। কিন্তু নেইমার এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েও পারেনি বলটি ক্রোয়েশিয়ার জালে জড়াতে। ফিরতি বলে আবারও ভিনিসিয়ুস থেকে নেইমার বল পেয়েছিলেন। কিন্তু রিচার্লিসন অফসাইড হয়ে যান।
৫৫তম মিনিটে বাম পাশে দানিলো বল এগিয়ে দেন নেইমারকে। কয়েকজনকে কাটিয়ে অসাধারণ এক শট নেন তিনি। কিন্তু গোলরক্ষক বলটি ধরে ফেলেন।
৫৬ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে ডান পাশে পাস দেন অ্যান্টোনি। বক্সের শেষ প্রান্ত থেকে ক্রস করেন রিচার্লিসন। কিন্তু ডিফেন্ডাররা রক্ষা করায় গোল থেকে বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।
৬৬ তম মিনিটে রদ্রিগোর পাস থেকে পাকুয়েতা অসাধারণ এক শট নিয়েছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক অসাধারণ দক্ষতায় বলটি ফিরিয়ে দেন। ফিরতি বলেও গোলের চেষ্টা করেছিলো ব্রাজিল। কিন্তু ডিফেন্সে গিয়ে বল ফিরে আসে।
৭৬তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় এবারও বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।
৮০ তম মিনিটে রদ্রিগোর পাস থেকে বল পেয়ে লুকাস পাকুয়েতা বাম পায়ের দারুণ এক কিক নিয়েছিলেন। কিন্তু আবারও গোলরক্ষক বাঁচিয়ে দিলেন ক্রোয়েশিয়াকে।
৮২তম মিনিটে রদ্রিাগোর কাছ থেকে বল পেয়ে রিচার্লিসন হেড করেন। কিন্তু বল চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। ৮৬তম মিনিটেও দারুণ এক সুযোগ নষ্ট হয় ব্রাজিলের। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার।
১০২ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ব্রোজোভিচের শটটি পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।
১০৫ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে ওয়ান-টু করে এগিয়ে গিয়ে গোলরক্ষ লিভাকোভিককে কাটিয়ে ক্রোয়েশিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন নেইমার।
১১৬তম মিনিটে মিস্লাভ ওরসিকের পাস থেকে বল পেয়ে ব্রুনো পেটকোভিচ দুর্দান্ত এক শটে গোল নিশ্চিত করেন।