‘আর কত অপেক্ষা করবে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। সাড়ে পাঁচ মাস ধরে বসে আছে। ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে তাদের। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে কেউ কেউ।’ এমন আকুতি ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর অভিভাবকদের। আবার করোনায় ভয়ও তাদের পিছু ছাড়ছে না। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার ‘মৃদু’ দাবি করোনার ভয়ে ‘জোরালো’ হচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখনো পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শিক্ষা বোর্ডগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ‘জেড’ আকৃতিতে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে পরীক্ষা নিলে কতগুলো শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন হতে পারে সে ব্যাপারে কাজ করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এতে একটি কক্ষে প্রথম বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী বসলে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসবে একজন। এ জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের অধীনে একাধিক উপকেন্দ্র নির্ধারণ করা হচ্ছে। যদিও এভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গতকাল রবিবার ইত্তেফাককে বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। স্কুল খোলার ১৫ দিন পর পরীক্ষা শুরু হবে। করোনা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই।’
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা দুর্যোগের কারণে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৩ দিন আগে স্থগিত হয়ে যায়। শুধু এইচএসসি নয়, সব ধরনের পরীক্ষাই স্থগিত হয়। বন্ধ হয় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৩ অক্টোবর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা রয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু হার না কমায় ওই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে অতি দ্রুত সময়ে এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে।
তবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটি অংশ চাইছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি কোনোভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায়, তাতেই মঙ্গল। আবার এমন অভিভাবকও কম নয়, যারা ঝুঁকির মধ্যে সন্তানকে পরীক্ষা হলে পাঠাতে রাজি নন। সায়মা নামে এক পরীক্ষার্থী জানায়, ‘এক বই কতবার রিভিশন দেব। আবার রিভিশন না দিলেও ভুলে যাচ্ছি। সব মিলে মানসিক যন্ত্রণায় আছি। মনে হয়, পরীক্ষা হয়ে গেলেই ভালো।’ আর অভিভাবক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তানের দুশ্চিন্তা দেখে মনে হয়, পরীক্ষা হয়ে গেলে সে মুক্তি পাবে। আবার করোনার ভয়ে ভাবি, আগে সন্তানের বেঁচে থাক। পরে অন্য কিছু।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফজর আলী বলেন, বিশেষ ব্যবস্থায় কেন্দ্র সংখ্যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ করে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, কোনো ব্যক্তি কি ঘরে বসে আছেন? অফিস আদালত খোলা, বাস ও লঞ্চ স্টেশন চালু, ব্যাংক-বীমা বাজার-ঘাটও খোলা। বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষেও মত দেন তিনি।
রাজধানীর ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মাকসুদ উদ্দিন বলেন, এই পরীক্ষা নিয়ে আর বিলম্ব করা ঠিক হবে না। প্রতি বেঞ্চে এক জন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া যায়। বিষয় না কমিয়ে শুক্রবার বাদে সপ্তাহে টানা ছয় দিন পরীক্ষা নিয়ে ১৫টি বিষয় ১৫ দিনে শেষ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
তবে সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ শেখ জুলহাস উদ্দিন বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার এখনো সময় হয়নি। একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ২ হাজার পরীক্ষার্থী হলে তার সঙ্গে অভিভাবকসহ কমপক্ষে হলে ৪ হাজার লোক আসবে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পথ একটি। ফলে প্রবেশের সময় বা বের হওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।