বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারী কতদিন থাকতে পারে, তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যকে ‘অদূরদর্শী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকার যখন দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষের মনোবল চাঙ্গা রাখারা নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, তখন করোনার আয়ুষ্কাল নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কোনো কোনো কর্মকর্তার অদূরদর্শী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য জনমনে হতাশা তৈরি করছে।”
শুক্রবার ঢাকায় নিজের সরকারি বাসভবন থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।
বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের ১০৩ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে হাজির হয়ে মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশের অচিরেই মুক্তি ঘটছে না।
“বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিস্থিতি বিবেচনা করে করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি দিন স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহারে নাও থাকতে পারে।”
তার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, “এ ধরনের সমন্বয়হীন, অযাচিত বক্তব্য থেকে নিজেদের বিরত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। স্পর্শকাতর এই সময়ে দায়িত্বশীল পদে থেকে কারো দায়িত্বহীন বক্তব্য রাখা সমীচীন নয়।”
খুলনায় রোগীর স্বজনদের হামলায় চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এই সঙ্কটে ফ্রন্টলাইনে কর্মরত যোদ্ধাদের অনেকেরই দেশ জাতির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এ পর্যন্ত ৪২জন চিকিৎসক, ২৬ জন পুলিশ সদস্যসহ নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্ট, সাংবাদিক, আনসার সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে খুলনায় একজন চিকিৎসককে হত্যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং নিহত ডা. রাকিবের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
“আমি এই সঙ্কটে চিকিৎসকসহ সম্মুখযোদ্ধাদের এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানাচ্ছি। মনে করিয়ে দিতে চাই, শেখ হাসিনার সরকার অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। অন্যায়কারী যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তার রেহাই নেই।”
ভাইরাস বিস্তারের বর্তমান পর্যায়ে সরকারির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান দলের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “আমাদের আশার শেষ ঠিকানা, চেতনার বাতিঘর, সঙ্কটে আস্থার প্রতীক শেখ হাসিনা দিনরাত নিরলস পরিশ্রমম করছেন। তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেতাকর্মীরা অতীতের মতো সাহসী ও মানবিক ভূমিকা পালন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, জোনভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরপরই দ্রুত এবং কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে, প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমন্বয়।
“সঠিক সমন্বয় সাধন সম্ভব হলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে নিবিড় মনিটরিংয়ের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শক্তিশালী টিমওয়ার্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
“যে সকল এলাকা লকডাইন করা হবে, সে সকল এলাকার জনসাধারণকে ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিদিন ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে আমাদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকলের সহযোগিতায় আল্লাহর রহমতে এই সঙ্কট আমরা কাটিয়ে উঠব ইনশাল্লাহ।”