যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন কেনাকাটায় স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে মনে করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ কারণেই কেনাকাটায় দুর্নীতি হচ্ছে বলে তারা অভিমত দিয়েছে। রোববার সংসদ ভবনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবের হোসেন চৌধুরী, হাফিজ আহমদ মজুমদার, বীরেন শিকদার, মনজুর হোসেন, রওশন আরা মান্নান এবং আবিদা আনজুম মিতা অংশ নেন।
বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্পে বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনায় একটি সংসদীয় সাব-কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পগুলোতে কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন অগ্রগতি নেই। কত টাকা বরাদ্দ ছিল, খরচ কত করেছে এগুলো দেখা হলেও প্রকৃত অর্থে তৃণমূল পর্যায়ে এই খরচের প্রভাব কী, মানুষ কতটুকু সেবা পাচ্ছে- সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। বৈঠকে প্রকল্পগুলোর সোশ্যাল অডিটের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এটা করা হলেই আসলে বোঝা যাবে তৃণমূলে কতটুকু সেবা যাচ্ছে।
বৈঠকে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সাবের চৌধুরী বলেন, এখানে এক ধরনের সিন্ডিকেট কাজ করছে। এরা সবাই মিলেমিশে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। প্রথম এক বছর এগুলো ভালো থাকে, তারপর সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তারপর যন্ত্র ঠিক করতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। সেখানে আবার কোটি কোটি টাকা রক্ষণাবেক্ষণের নামে খরচ হয়। দুর্নীতিটা যে ব্যাপক হচ্ছে এবং পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে সেটা বৈঠকে উপস্থিত সব এমপি তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরেছেন।
তিনি জানান, আগামী মাস থেকে সংসদীয় সাব-কমিটি প্রকল্প ধরে বিস্তারিত আলোচনা করবে। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবের হোসেন চৌধুরীকে।
বৈঠকের পরে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তব অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩২টি ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে (নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত) ২৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছয়টি ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে (নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত) চারটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর জন্য বর্তমানে ১৩ হাজার ৭৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ১২ হাজার ৮৫০ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কাজ করছেন এবং প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রায় ছয় হাজার জন সেবা পাচ্ছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রায় চার হাজার ৬০৭ জন নতুন ডাক্তার পদায়ন করা হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, ১০ হাজার নার্স নিয়োগ করা হয়েছে এবং অন্যান্য জনবলের নিয়োগ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। ওষুধসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সংকট উত্তরণের জন্যও মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন সিবিএইচসি অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় কাজ চলছে।