উশু ম্যাচ শুরুর কথা বেলা ৪টায়। কিন্তু শুরু হতে হতে ঘড়ির কাটা রাত সাড়ে ৮টা ছুঁইছুঁই। তখনও দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের সোনা জয়ের আশা বেঁচে ছিল। কিন্তু সজীব হোসেন পারেননি সোনালী হাসি উপহার দিতে। মিলিয়ে গেছে দেশের আশাও। এসএ গেমসের পঞ্চম দিনের প্রাপ্তি কেবল ৫টি রুপা।
কাঠমান্ডু-পোখারায় বৃহস্পতিবার পাঁচটি ইভেন্টের ফাইনালে উঠেও সেরা হতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেট। সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন শুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকী। ঘরোয়া সাঁতারে ভুরিভুরি সোনা জয়ী লন্ডন প্রবাসী জুনাইনা আহমেদও হতাশ করেছেন। এই নিয়ে টানা দুই দিন বাংলাদেশ পেল না কোনো সোনার পদক।
মেয়েদের ক্রিকেটে মালদ্বীপের বিপক্ষে ২৪৯ রানের বিশাল জয়ের কথা অবশ্য বলা যায় আলাদা করে। ফাইনাল তারা নিশ্চিত করেছে আগেই। খানিকটা স্বস্তির ছোঁয়া মিলেছে ছেলেদের ফুটবলেও। প্রথম দুই ম্যাচের হতাশা পেছনে ফেলে ধরা দিয়েছে প্রথম জয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে টিকে রয়েছে সোনার আশা।
শুটিংয়ে ১ রুপা, বাকী ও বাকিদের হতাশা
সাতদোবাতোর ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে মেয়েদের ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনে দলগত ইভেন্টে ১৮৩১ দশমিক ১ স্কোর গড়ে রুপা জিতেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে খেলেন সৈয়দা আতকিয়া হাসান দিশা (৬১৫.৭), উম্মে জাকিয়া সুলতানা টুম্পা (৬১২.২) এবং শারমিন আক্তার রত্না (৬০৩.২) ।
মেয়েদের ৫০মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনের এককে দিশা ষষ্ঠ এবং টুম্পা সপ্তম হন। রত্না ফাইনালে উঠতে পারেননি। ২২৮ স্কোর নিয়ে ছেলেদের ১০মিটার এয়ার রাইফেল এককে ব্রোঞ্জ পান গত কমনওয়েলথ গেমসে রুপা জয়ী আব্দুল্লাহ হেল বাকী। রবিউল হোসেন এবং রাব্বি হাসানকে নিয়ে পরে দলগত ইভেন্টেও ব্রোঞ্জ পান তিনি। তিন জনে মিলে স্কোর ছিল ১৮৪০।
শুট আউটের ষষ্ঠ রাউন্ডে ভারতের দুই প্রতিযোগীর সঙ্গে দারুণ লড়াই জমেছিল বাকীর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দশমিক ২ স্কোরে পিছিয়ে থেকে সোনার লড়াই থেকে ছিটকে যান তিনি। লড়াই শেষে এই শুটারের আক্ষেপ, দর্শকের কোলাহলে নড়ে গিয়েছিল মনোযোগ।“আমি চেষ্টা করছিলাম নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিজেকে সামলে যেন সেরাটা দিতে পারি, সেই চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু শেষ দুই শট (১০.০ ও ১০.১) বাজে হয়ে গেল। অবশ্য খুব বাজে নয়। কিন্তু যেরকম চেয়েছিলাম, সেরকম হয়নি। তবু আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। লড়াই করেছি।”
“অনান্য শটের সময়ের চেয়ে শেষ শটের সময়ে কোলাহল বেশি ছিল। আমি এতে অভ্যস্ত নই। যে কারণে মনোযোগ ওদিকে চলে গিয়েছিল। প্রতিপক্ষ কত স্কোর করেছে সেটা দেখিনি। স্কোরবোর্ডের দিকেও তাকাইনি। নিখুঁত শট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু হয়নি।”
উশুতে রুপা এনে দিলেন মর্জিনা ও সজীব
লাগানখেলের আর্মি ফিটনেস ফিজিক্যাল সেন্টারে নান চুয়ান নান দা অলরাউন্ড ইভেন্টে বাংলাদেশকে রুপা এনে দিয়েছেন মর্জিনা আক্তার। শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা মর্জিনা (১৬ দশমিক ৩০) হেরে যান নেপালের প্রতিযোগীর (১৯ দশমিক ৯১) কাছে।
অল্পের জন্য সোনার পদক হাতছাড়া করার আক্ষেপ মর্জিনার আছে। পাশাপাশি আছে রুপা জয়ের আনন্দও। অর্জনের মুহূর্তটায় তার মনে পড়েছে বাবার কথা।
বাবা মোহাম্মদ সুলতান ছাড়া পরিবারের কেউই চায়নি মেয়ে উশুতে আসুক। আজ সেই মেয়ে যখন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সেরা, বাবা তখন না ফেরার দেশে। মেয়ের কণ্ঠে উঠে এলো বাবার জন্য হাহাকার।
“আজকে একটু ভারসাম্য হারানোর কারণে সোনার পদকটা হাতছাড়া হয়ে গেলো। ছোট বেলায় বাবা কক্সবাজারে একটা ক্লাবে নিয়ে গেলেন, ভর্তি করিয়ে দিলেন। মা বা পরিবারের কেউ রাজি ছিলেন না। শুধু বাবা রাজি ছিলেন।”
“আস্তে আস্তে ক্লাবে যেতে থাকলাম, জেলাভিত্তিক, এরপর এখানে ন্যাশনালে খেললাম, ২০১৩তে বাংলাদেশ গেমসে সোনা জিতলাম। ঘরোয়াতে বেশ কয়েকটা আসরেও পদক জিতলাম। এখানে এসে পেলাম রুপা। বাবা বেঁচে থাকলে আজ সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।”
দাও শু অলরাউন্ড ইভেন্টে রাশেদ হোসেন ও তাইজি জিয়ান অলরাউন্ড ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন দীপ্তি দাস।
রাতে ৫৬ কেজি সান্দায় সেরা হওয়ার লড়াইয়ে ভারতের উচিত শর্মার কাছে হেরে যান সজীব হোসেন। পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের সোনার পদক পাওয়ার আশা শেষ ওখানেই।
ভারোত্তোলনে রাজকুমার ও ফুলপতির রুপা
পোখারায় ছেলেদের ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণিতে রুপা জিতেছেন রাজকুমার রায়। স্ন্যাচ (৮০) এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্ক (১০৪) মিলিয়ে ১৮৪ কেজি তুলেন তিনি। এই ইভেন্টে সোনা জিতেছেন শ্রীলঙ্কার ওয়াইডিআই কুমারা (মোট ২৩৫ কেজি)।
মেয়েদের ৫৫ কেজিতে ফুলপতি চাকমাও পেয়েছেন রুপা। স্ন্যাচ (৬৩) ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক (৮৫) মিলিয়ে ১৪৮ কেজি ওজন তুলেন তিনি।
ছেলেদের ৬১ কেজিতে বাংলাদেশের মোস্তাইন বিল্লাহ (২৩৫ কেজি), মেয়েদের ৪৯ কেজিতে মোল্লা সাবিরা সুলতানা (১৩০ কেজি) তুলে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।
অ্যাথলেটিক্সে পারলেন না জহির
দশরথ স্টেডিয়ামে ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের হিটে তৃতীয় হয়ে জহির রায়হান ও অষ্টম হয়ে আবু তালেব উঠেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু এরপরই বিপত্তি। দৌড় শেষ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজনই।তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ব্লু-ক্রস হাসপাতালে। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক পবন রাওয়াল দুজনকে আর ট্র্যাকে ফেরার ছাড়পত্র দেননি। চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘দুজনের পালস রেট স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় আমরা তাকে ফাইনালে অংশ নেয়ার অনুমতি দিতে পারছি না।’
তায়কোয়ান্দোর পুরুষ অনূর্ধ্ব-৮৭ কেজিতে রাসেল খান ও মেয়েদের অনূর্ধ্ব-৬৭ কেজিতে সালমা খাতুন ব্রোঞ্জ পান। ব্রোঞ্জ এসেছে ব্যাডমিন্টনের মিশ্র দ্বৈতে। সব মিলিয়ে পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ১৩টি ব্রোঞ্জ।