ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামি উম্মে সুলতানা পপি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোনগাজাী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ও নুসরাতের সহপাঠী পপি পুড়িয়ে হত্যার আগে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকার করেছেন। পপি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মামলার প্রধান আসামি সিরাজ উদ দৌলার শ্যালিকার মেয়ে।
শুক্রবার বিকেলে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।
১৬৪ ধারায় পপির জবানবন্দি শেষে আদালত চত্বরে প্রেস ব্রিফিং করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন। তিনি জানান, শুক্রবার বিকেল ৪টায় পপিকে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের কাছে দায় স্বীকার করে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৯টায় তার জবানবন্দি দেওয়া শেষ হয়। তিনি বলেন, নুসরাত হত্যার ঘটনায় পপি প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তিনিই (পপি) নুসরাতকে ৬ এপ্রিল নিচতলা থেকে ডেকে সাইক্লোন শেল্টারের তৃতীয় তলার ছাদে নিয়ে যান। এরপর নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যার ঘটনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এসব কথা স্বীকার করেন পপি। মঈন উদ্দিন বলেন, আরও কিছু তথ্য দিয়েছেন পপি। তদন্তের স্বার্থে সবকিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, উম্মে সুলতানা পপিকে ১০ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। শুক্রবার তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে দায় স্বীকার করেছেন।
এদিকে আসামি জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদকে একই আদালত আরও তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। জাবেদ হোসেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে যান নুসরাত। তিনি এই মাদ্রাসার এবারের আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে ২৭ মার্চ মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন নুসরাত। এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। মামলা তুলে নিতে আসামিপক্ষ নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে। নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নুসরাত। এর জের ধরেই তাকে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৮০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচ দিন লড়ার পর মারা যান নুসরাত।
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। এ পর্যন্ত অধ্যক্ষ সিরাজ, মাদ্রাসাছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত, জোবায়ের আহম্মেদ, জাবেদ হোসেন, মাদ্রাসাছাত্রী উম্মে সুলতানা পপি এবং সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলমসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত সাতজন আসামি। তাদের মধ্যে নুর উদ্দিন ও শাহাদাত রোববার রাতে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নুর উদ্দিন ও শাহাদাতের জবানবন্দিতে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের নাম উঠে এসেছে। যৌন হয়রানি মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পর তারই নির্দেশে নুর উদ্দিন ও শাহাদাত অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নামে। নুসরাতের শরীরে আগুন দেওয়ার পর মোবাইল ফোনে রুহুল আমিনকে প্রথম জানিয়েছিল শাহাদাত। দু’জনের মধ্যে মাত্র ছয় সেকেন্ড কথা হয়েছিল। রুহুল আমিনকে শুক্রবার বিকেলে আটক করা হয়েছে।