প্রশ্ন ছিল ইন্দোর টেস্টে বাংলাদেশের হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে। কিন্তু নাজমুল হাসান বললেন, টেস্ট শুরুর আগেই তার মন ভেঙে গেছে! টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারার হতাশায় ঘর থেকেই নাকি বের হতে চান না বিসিবি প্রধান। পরে অবশ্য টেস্ট দল নিয়েও বোর্ডের পকিল্পনার কথা জানালেন তিনি।
ইন্দোর টেস্টে ভারতের কাছে উড়ে যাওয়ার পরপরই সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে হয়ে গেল বিপিএলের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠান। পরে বিসিবি সভাপতি মুখোমুখি হলেন সংবাদমাধ্যমের। টেস্টের পারফরম্যান্স নিয়ে জানতে চাওয়া হলেও তিনি আগে জানালেন টি-টোয়েন্টি নিয়ে হতাশার কথা।
“টেস্টের আগেই মন ভেঙে গেছে… টেস্ট তো পরে। এই সিরিজে অনেক আশা ছিল, টি-টোয়েন্টি আমরা জিতব। এর আগে তিন-তিনবার, ভারতের সঙ্গে শেষ ওভারে বা শেষ বলে হেরেছি। প্রতিবার শেষ করতে গিয়ে হেরেছি। এরমধ্যে নিশ্চিত জয়ের কথা ছিল বিশ্বকাপে (২০১৬ টি-টোয়েন্টি), আর নিদাহাস ট্রফি (২০১৮)।”
“এবার মনে-প্রাণে বিশ্বাস ছিল আমরা জিতব। প্রথম ম্যাচ জিতেছি। দ্বিতীয় ম্যাচ ওরা ভালো খেলে জিতেছে। তৃতীয় ম্যাচ তো নিশ্চিত জেতা ম্যাচ। ওই হার আসলে নিজেই মানতে পারছি না… আমি বাসা থেকেই বের হই না। কোথাও যেতেই চাই না। মেনেই নিতে পারছি না ওই ম্যাচ হারব।”
প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজে এগিয়ে গেলেও ভারতে পরের দুই ম্যাচ হেরে টি-টোয়েন্টি সিরিজও হেরেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে ১৭৫ রান তাড়ায় এক পর্যায়ে বাংলাদেশ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। কিন্তু ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখের ৪৮ বলে ৮১ রানের পরও ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা পারেননি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে।
বিসিবি সভাপতির মতে, অন্যরা একটু করে অবদান রাখলেও জিতে যেত বাংলাদেশ।
“নাঈমের মতো একটি ছেলে রান করতে পারলে, মিঠুন যদি পারে, তাহলে আমাদের মূল ক্রিকেটার যারা… সৌম্য-লিটন-মুশফিক-রিয়াদ, ১০ রান করে করলেও আমরা ম্যাচ জিততাম। ফাইনালে গিয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে যদি রান না পাই, তাহলে তো ভাগ্য খারাপ। ওরা তো কেউ খারাপ ক্রিকেটার নয়। হয় না কেন জানি…।”
“এবার বিশ্বাস ছিল, আমরা জিতবই। হলো না, সেই শোকই এখনও ভুলতে পারিনি।”
টি-টোয়েন্টি সিরিজে দারুণ লড়াই হলেও প্রথম টেস্টে ভারতের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। নিজেদের সবশেষ টেস্টেও বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে হেরেছে নবীন টেস্ট দল আফগানিস্তানের কাছে। গত বছর দেশের মাটিতেই বাংলাদেশ হেরেছে দুর্বল জিম্বাবুয়ের কাছে।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামো, মান, সুযোগ-সুবিধা, সেসব নিয়ে প্রশ্ন অনেক দিনের। তবে বিসিবি প্রধান দায় দিলেন ক্রিকেটারদের মানসিকতাকে।
“টেস্ট আমি যতটা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে খারাপ হয়েছে। একটা ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, ভারতের টেস্ট দল এখন অনেক শক্তিশালি আমাদের চেয়ে। তবে আপনারা কাঠামোর কথা বলেন… দক্ষিণ আফ্রিকার একাডেমি তো বিশ্বের সেরা বলা হয়। ওরাও ভারতে গিয়ে তিন দিনে হেরেছে।”
“শুধু পিচ বা আবহ তৈরি করে লাভ নেই। ক্রিকেটারদের মধ্য থেকেও আসতে হবে। ভারতে গিয়ে আমি দেখেছি, ওদের ক্রিকেটারদের চিন্তাধারা ভিন্ন রকেমর। ওদের মন-প্রাণ, জীবনের সবকিছুই ক্রিকেট। একটা ছেলে জাতীয় দলে সুযোগ পাবে কিনা, চিন্তাই করে না। বাচ্চা একটা ছেলে, তার লক্ষ্য স্কুল দলে খেলা। রঞ্জি ট্রফিতে খেলার জন্য কষ্ট করছে। ক্রিকেটকে ভালোবেসে ক্রিকেটের জন্য জীবন উৎসর্গ করছে। এত কষ্ট করছে, এত শৃঙ্খলাবদ্ধ, এত নিয়মকানুন মানে ওরা, আমাদের মধ্যে এটা দেখি না। ভারতে এসেছে, আমি নিশ্চিত আমাদের মধ্যেও আসবে। একটু সময় লাগবে।”
তবে বিসিবি সভাপতির বিশ্বাস, এক-দেড় বছরের মধ্যে টেস্ট দলও দাঁড়িয়ে যাবে।
“আমরা নতুন অনেককেই পরখ করে দেখব। আগেই বলেছি। টেস্টে আমরা সবচেয়ে পেছানো। সবচেয়ে দুর্বল। ভারতের দিকে দেখুন, টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে রোহিত শর্মা ছাড়া আর কেউ টেস্ট দলে নেই। একজনও না।”
“আমাদের আলাদা দল গড়তে হবে। আমরা যা পরিকল্পনা করছি, তাতে আমার ধারণা এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে আমাদের টেস্ট দল দাঁড়িয়ে যাবে। জিতবে কিনা জানি না, তবে প্রপার একটা টেস্ট দল হবে।”