দুটি ভিন্ন শারীরিক সমস্যা। প্রাথমিক লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতিও এক নয়।
হার্ট অ্যাটাক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এই দুটিকে এক মনে করা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম হয়। এদের মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে হলে জানতে হবে কোন সমস্যায় শরীরে কী ঘটে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হল।
হার্ট অ্যাটাক
হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলোতে বা ‘করোনারি আর্টারিজ’য়ে ‘ব্লক’ তৈরি হলে সেখানে রক্ত সঞ্চালন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক দেখা দেয়। এই ধমনীগুলো হৃদপিণ্ডে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ করে। আর হৃদপিণ্ড যেহেতু একটি পেশি, তাই তার অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রয়োজন আছে। তাই দ্রুত ‘ব্লক’ সারিয়ে বা বিকল্প ব্যবস্থায় রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক না করলে হৃদযন্ত্রের পেশিগুলো মরে যাওয়া শুরু হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের পরে যা হয়: হার্ট অ্যাটাক হলে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা কিংবা আঁটসাঁট অনুভুতি হতে পারে। বুকে প্রচণ্ড চাপ ও কনকনে ব্যথার পাশাপাশি হৃদযন্ত্র দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে এমন অনুভুতিও হতে পারে। এছাড়াও শরীরের উপরিভাগের বাম দিকে যেমন বাম কাঁধ ও বাম হাতে ব্যথা অনুভুত হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হলে হৃদস্পন্দন থেমে যায় না, যা ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের ক্ষেত্রে হতে পারে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট
হৃদস্পন্দন একেবারে থেমে যায় ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হলে। হৃদযন্ত্রে জৈব-বৈদ্যুতিক গোলমালের কারণে এর সুত্রপাত হয়, যার ফলাফল হিসেবে পরবর্তী সময়ে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যায়। একে বলা হয় ‘অ্যারিদমিয়া’।
‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের পর যা হয়: যেহেতু হৃদস্পন্দন থেমে গেছে, সেহেতু রোগী মূর্ছা যেতে পারে, নাড়ির স্পন্দনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না পেলে রোগী কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করতে পারেন।
পার্থক্য
‘হার্ট অ্যাটাক’ এবং ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের মধ্যে মূল তথাৎ এটাই। ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ে হৃদযন্ত্রের পেশিতে রক্ত সরবরাহ থেমে গেলেও হৃদস্পন্দন থামে না তবে ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হলে হৃদস্পন্দনই থেমে যায়।
‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের ঝুঁকি
অতিরিক্ত ওজন, বংশগত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অলস জীবনযাপন ইত্যাদি ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের প্রধান কারণ।
‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের কারণ
মাদকদ্রব্য সেবন, হৃদযন্ত্রের ওষুধ সেবনে গোলমাল, হৃদযন্ত্রের পেশির ক্ষতি, হৃদস্পন্দনের গতির অনিয়ম ইত্যাদি ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের অন্যতম কারণ।
আসল কথা হল
‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’য়ের ঝুঁকি কমানোর জন্য চাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই শারীরিক সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসা দেওয়াই জীবন বাঁচানো একমাত্র উপায়।
‘কার্ডিওপালমোনারি রিস্যাসিটেইশন (সিপিআর)’ দিতে হবে তৎক্ষণাৎ এবং হাসপাতালে না নেওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যেতে হবে।
অপরদিকে ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের ক্ষেত্রে রোগী মূর্ছা গেলে অ্যাম্বুলেন্স খবর দিতে হবে এবং ‘সিপিআর’ দিতে হবে। চিকিৎসকের আপত্তি না থাকলে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে।
মনে রাখতে সুস্থ থাকার জন্য এই তথ্যের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।