প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ২১ জুলাই, বুধবার দুপুরে এই দুই নেতার মধ্যে ফোনালাপ হয়। এমন সময় ইমরান খান ফোন করলেন যখন চীন ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন চলছে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করতে চান ইমরান খান। এই সম্পর্ক অনেকদিন থেকেই শীতল অবস্থায় রয়েছে। তবে এই ফোনালাপকে দিল্লি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে ভয়েস অফ আমেরিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কি কথা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেসসচিব ইহসানুল করিম জানান, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ও এর মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চান।
এর একদিন আগেই সম্ভাব্য এই ফোনালাপের খবর প্রচার করে ভারতীয় মিডিয়া। ওই খবরে বলা হয়, এই অঞ্চলে চীন যে প্রভাব বিস্তার করছে এটা তারই ইঙ্গিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বিশেষ সুসম্পর্ক তৈরির উদ্যোগকে দিল্লি অনেকটা বাঁকা চোখেই দেখে আসছে বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
এর আগে গত বছরের ২ অক্টোবর শেখ হাসিনাকে ফোন করে তার কুশলাদি জানতে চান ইমরান খান। আর ৩ অক্টোবর দিল্লি সফরে যান শেখ হাসিনা। তাই দিল্লি সফরের একদিন আগে ইমরান খানের টেলিফোন নিয়ে ওই সময় বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।
ভারতীয় বিশ্লেষকরা প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পেছনে চীনকেই দায়ী করছেন। আগে একমাত্র চীনের নির্ভরযোগ্য মিত্র ছিলো পাকিস্তান। চীন-ভারত সম্পর্কে যখনই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তখন অন্য প্রতিবেশিরা নিরব ভূমিকাপালন করেছে। নেপাল, শ্রীলংকার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্কের মধ্যেই দেয়াল তৈরি হয়েছে।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে লক্ষণী করার বিষয় নেপাল হঠাৎ করেই তার মানচিত্র সংশোধন করে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ তিনটি এলাকাকে পার্লামেন্টে অনুমোদন করে নেয়। ঠিক একইসময়ে বাংলাদেশি পণ্যের উপর শতকরা ৯৭ শতাংশ হারে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয় চীন। ভারতীয় মিডিয়া যাকে চীনের ‘খয়রাতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এতে ঢাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
এদিকে করোনার ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল নিয়ে ঢাকা-বেইজিং যখন একমত তখনো ভারতীয় মিডিয়ায় অস্বস্তির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। চীনের আরেকটি প্রস্তাবও এই সময় আলোচনায় আসে। আর তা হচ্ছে মহানগরগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের একটা মেলবন্ধন। এর নাম দেয়া হয়েছে সিস্টার সিটি।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, এটা ভাববার কোনো কারণ নেই যে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব ফেলার প্রয়াশ একেবারেই নিরীহ। উভয় দেশই বাংলাদেশকে তাদের কক্ষফুটের মধ্যে রাখতে চাইছে। যখন ভারতীয় মূলনীতি কেবলমাত্র স্বল্পমেয়াদি চিন্তা দ্বারা পরিচালিত এবং তা একদল কেন্দ্রিক, চীন তখন বাংলাদেশে একটা দীর্ঘমেয়াদী খেলা খেলছে।