হাড়জোড়া শুধু ঔষধি উদ্ভিদই নয়, আলংকারিক উদ্ভিদ হিসেবেও সুপরিচিত। শোভাবর্ধক হিসেবে এই গাছ বিভিন্ন বাগানে লাগানো হয়। গাছটি চমৎকার ঔষধি গুণসম্পন্ন। এই লতা স্কার্ভি, নাক, কান এবং হাড়ভাঙা চিকিৎসায় বিশেষভাবে ব্যবহার্য। আবার গাছের কচি কাণ্ড সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়।
হাড়জোড়া হাড়ভাঙায় অত্যন্ত কার্যকর। এর ডাঁটা ও পাতা সমপরিমাণ রসুন ও গুলগুলি একসঙ্গে বেটে একটু গরম করে ভাঙা স্থানে প্রলেপ দিলে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে। প্রলেপটি দু-একদিন পরপর পরিবর্তন করে লাগাতে হবে। হাড়জোড়ায় একটি রাসায়নিক যৌগ থাকে যা ভাঙা হাড় জোড়া লাগাতে সাহায্য করে। সে কারণে হাড়ভাঙার ফোলা ও ব্যথা সারাতে সমপরিমাণ হাড়জোড়ার ডাঁটা, গন্ধবাদালি ও নিশিন্দা পাতার সঙ্গে অর্ধেক পরিমাণ ধুতরার পাতা একসঙ্গে বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফোলা দুটোই চলে যাবে।
অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে কচি হাড়জোড়ার ডাঁটা কুচি কুচি করে কেটে শুকিয়ে সেই গুঁড়া দুই চামচ পানিসহ দিনে দু’বার কিছুদিন খেলে তা স্বাভাবিক হবে। একইভাবে গুঁড়া সকাল-বিকেল দু’বার খেলে শ্বাস রোগেরও উপশম হয়। কৃমির উপদ্রব হলে উপর্যুক্ত হাড়জোড়া চূর্ণ ঘিয়ে ভেজে পানিসহ দুই-তিন চামচ দিনে দু’বার খেলে এ অসুবিধা দূর হবে।
কানের প্রদাহে ডাঁটার রস উপকারী; কানে পুঁজ হলে ৫০ গ্রাম সরিষার তেলে ২৫ গ্রাম হাড়জোড়ার ডাঁটা চাক চাক করে কেটে আলুভাজার মতো ভেজে ওই তেলের দু-এক ফোঁটা করে কানে দিলে কানের প্রদাহ সেরে যাবে। হাড়জোড়ার লতা ও পাতার অ্যালকোহলীয় নির্যাস উচ্চ রক্তচাপ রোধ ও মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
কচি ডাঁটার ভস্ম বদহজম, পেট ফাঁপা ও অন্যান্য পেটের পীড়ায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। কোনো কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়লে এ ডাঁটার রস নাকে ব্যবহার করলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।
হাড়জোড়া স্থানবিশেষ হাড়ভাঙা লতা বা হারেঙ্গা নামেও পরিচিত। এ গাছ দেশের চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা এবং সুন্দরবনে সহজলভ্য। প্রিয় আবাস বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের ঝোপজঙ্গল। এটি বৃহৎ শাখান্বিত বীরুৎসদৃশ আরোহী। সরল এবং সরু পত্র-পতিমুখ আকষীযুক্ত। কাণ্ড রসালো, চার-কোনাকার এবং ৪ পর্বযুক্ত। পত্র সরল, ৩ থেকে ৬ সেন্টিমিটার লম্বা, নরম এবং রসালো।
পত্রবৃন্ত দেড় সেন্টিমিটার লম্বা, উপপত্র জোড়বদ্ধ, প্রশস্ত ডিম্বাকার, সবুজ এবং ক্ষণস্থায়ী। মঞ্জরিদণ্ড আড়াই সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফুল ৪-অংশক, আড়াআড়িভাবে ৫ মিলিমিটার এবং লালচে রঙের। বৃতি পেয়ালাকার, দল খণ্ডক চারটি, প্রায় ২ মিলিমিটার লম্বা। পুংকেশর চারটি। প্রস্ফুটনকাল সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। ফল গোলাকার, পাকলে লাল এবং ১-বীজী। উষ্ণমণ্ডলীয় আফ্রিকা, আরব, মাদাগাস্কার, ভারত, শ্রীলংকা এবং জাভা এ গাছের আদিভূমি।